এম এ স্বপন : দেশের মোট মাদকাসক্তের ৬২ ভাগেরও বেশি মাদক নেয়া শুরু করে শিশু বয়স থেকে। গবেষণা বলছে, বর্তমানে শুধু ঢাকা শহরেই তিন লাখেরও বেশি মাদকাসক্ত পথশিশু রয়েছে। অর্থের অভাব, ভালো পরিবেশ কিংবা স্নেহবঞ্চিত হয়ে এসব শিশু শত অনাচার আর দুঃখ-কষ্টের মাঝে নেশায় জড়িয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করছে জীবন। যেন বেঁচে থাকাও বোঝা তাদের কাছে। জাদুর শহরে মধ্য রাতে মহাখালী ফ্লাইওভারে জুতার আঠা বা গাম দিয়ে তৈরি ড্যান্ডির নেশায় মত্ত দুই শিশু।
১০ বছরের শিশুর কথায় উঠে আসে, পোড় খাওয়া জীবনের গল্প। বাবা মারা যাওয়ায় অন্যজনের ঠিকানা এখন পথেই।
ড্যান্ডির নেশায় মত্ত শিশুদের একজন বলে, আমি ভাঙাড়ি টোকাই আর ভিক্ষা করি। টাকা না দিলে বাবা-মা ঘর থেকে বাইর করে দেয়।
আরেক শিশু বলে, কষ্টের জন্য এগুলো খাই। এগুলো খেলে অনস্যরকম লাগে। কেউ মারলে গায়ে লাগে না।
পাশেই ঘুমিয়ে আছে একদল পথশিশু। নেশায় ভোর, নেশায় ডুবে সারাদিন আর এতেই মত্ত সারারাত।
মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটাও যখন ক্লান্ত, ঝিমিয়ে পড়ছে শহর, তখনও পথের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেশার হাতে।
এ তো গেল একটি স্পট। রাজধানীর গাবতলী, গুলিস্তান, কমলাপুর, সদরঘাট এলাকায় এমন হাজারো পথশিশুর প্রতিদিনের গল্প প্রায় এমনই। দেশে মোট কত শিশু মাদকাসক্ত তার পরিসংখ্যান না থাকলেও গবেষণা বলছে শুধু ঢাকাতেই রয়েছে তিন লাখেরও বেশি পথ শিশু, যারা মাদকাসক্ত।
এছাড়া মাদকাসক্তদের মধ্যে ৬২ ভাগের বেশি মাদক নেয়া শুরু করেন ১৮ বছর বা আরও কম বয়স থেকে। বহু বছরেও সম্ভব হয়নি পথশিশু কিংবা হতদরিদ্রদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখা।
সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান বেশ পুরানো। কিন্তু এখনো সড়কের পাশে তাকালে চোখে পড়ে মাদকাসক্তদের। এদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও। তাই এসব জনগষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং পুনর্বাসনের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ সমাজবিজ্ঞানীদের।
এসব শিশুকে মাদক থেকে দূরে রাখতে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ।
সুন্দর সমাজ ও দেশ গঠনে মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।