আতঙ্কে ৩৭ মন্ত্রী-এমপির

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় রাজনীতি

এম এ স্বপন : দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে বিগত মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের দুই শীর্ষ নেতা, একটি সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও ঢাকার চারজন এমপি ক্যাসিনো তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে বর্তমান ২৫ জন এমপি ও সাবেক ১২ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীর কালো তালিকায় রয়েছেন।
অভিযুক্ত এসব মন্ত্রী ও এমপির তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডার, কমিশন, মাদক ও ক্যাসিনোসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকজন এমপির ব্যাংক হিসাব তলবএবং স্থগিত করা হয়েছে। কয়েকজনের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিতর্কিত এসব কর্মকা-ের সঙ্গে অনেকের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও ঠিক কার কার নাম পরবর্তী তালিকায় রয়েছে তা নিয়ে আতঙ্কিত এমপি-মন্ত্রীরা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযান লোক দেখানো নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে নিজ দলে শুদ্ধি অভিযান চালাবেন পরে বিরোধী দলের মধ্যে এই অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অনেক এমপি, নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নজরদারিতে রয়েছেন। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেননি এবং ভবিষ্যতেও দেবেন না। সে জন্য চলমান শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর। অনেকে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে, দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করছেন। এতে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক্ষত্রে যত প্রভাবশালীই হোকনা কেন, কেউ পার পাবে না। আর অভিযুক্তরা আতঙ্কিত হবেন এটাই স্বাভাবিক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের অব্যাহতি দিয়ে পরবর্তী দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আকস্মিকভাবে শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একে একে যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজ, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নানা অভিযোগের মুখে যুবলীগের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার পরিবারের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত এবং বিদেশ যাত্রার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকেও। বহিষ্কার করা হয়েছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদকে। পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেব নাথ এমপিকে।
ইতোমধ্যে চট্টগ্র্রামের এমপি ও সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে আরো ২০ জনের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুসহ তার পরিবারের সদস্যদের। আরো কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এ তালিকায় রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক এক যুবলীগ নেতা ও মন্ত্রী, ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচিত দু’বারের এক এমপি, ঠাকুরগাঁও থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এক এমপি, আবাসন ব্যবসায়ী রাজশাহীর এক এমপি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, ঢাকার একাধিক এমপি, নরসিংদীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এক এমপি, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের কয়েকজন এমপি, কক্সাবাজারের এক সাবেক এমপি কালো তালিকায় রয়েছেন। জামালপুরের এক এমপি যিনি বিগত সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তার বিষয়েও সরকারপ্রধানের দৃষ্টি রয়েছে।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর এমন ভয়ঙ্কর সব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবাই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে কি না সেটি জানতে দলটির এমপি-মন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তবে তালিকায় কাদের নাম রয়েছে সেটি বলতে পারছেন না নেতারা। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না দুর্নীতির সাথে জড়িত এসব মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের। বেশির ভাগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপি অভিযানের পক্ষে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। আপাতত চুপচাপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সবার একটাই প্রশ্ন তালিকায় সিটিং এমপিদের মধ্যে কারা রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক এমপি, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের নেতাদের বিষয়েও জানতে চান সবাই। আসলে তালিকায় কার নাম আছে তা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের কেউই জানেন না। কারণ, অভিযানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও একক সিদ্ধান্তে চলমান রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *