আওয়ামী লীগ
মহসীন আহমেদ স্বপন : টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দলকে সুসংগঠিত ও হাইব্রিডমুক্ত করতে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে দলটি। বিগত সময়ে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বার বার তাগাদা দিয়েও কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব টিমের তত্ত্বাবধানে দলে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি, নানা ধরণের অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত অসাধু, সুবিধাবাদী প্রকৃতির অন্তত সহা¯্রাধিক নেতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে বিভিন্ন দল থেকে এই ধরণের অসাধু ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে যোগদান করে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি আর অপকর্মের মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা অর্থের লোভে এই ধরণের অসাধু প্রকৃতির লোকদের দলে ভিড়িয়ে নিজেরা আর্থিক ভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তি। একই সঙ্গে দল হিসেবে ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এই ধরণের অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী চিন্থিত করেছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। চলতি মাস জুড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে তারা যাতে অংশ নিতে পারে সে জন্য আগে ভাগেই তাদের বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে অনুপ্রবেশকারী কোনো নেতা যাতে করে কাউন্সিলর ডেলিগেট হতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম এই অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করে। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের হাতে তালিকা দিতে নিদের্শ দেন।
আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতেই যেন বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা স্থান না পায় সেজন্য তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকম-লীর সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী তার নিজস্ব কিছু লোক এবং গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট মিলিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে পার্টি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি নিজেও আমার জেলার নেতাদের সাথে সেই বিতর্কিত তালিকা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা এই ব্যাপারে সতর্ক, যাতে সেই তালিকায় থাকা বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী কাউন্সিলে কোনো ধরনের জায়গা না পায়।
তিনি বলেন, বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনে বা কমিটিতে স্থান না পায়, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নেতাকর্মীদের সেভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের পর শুরু হয় আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ। এর ধারাবাহিকতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। একইভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পরে। এর অধিকাংশই ছিল বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির লোকজন। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি-মন্ত্রীর হাত ধরে এই অনুপ্রবেশ ঘটে।
এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের একাধিক সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগে অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ করেছে। যারা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। এরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে নানা ধরণের অপরাধ মুলক কর্মকান্ড করেছে। এই কারণে দলের ভাবমুতি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই এই এক হাজার অনুপ্রকেশকারী নেতাদের দল থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। ইতমধ্যে অনুপ্রবেশকারী নেতাদের চিন্থিত করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্য্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এদর তালিকা দেয়া হবে। আমাদের কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে তারা যাতে অংশ নিতে না পারে সে ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
চলচি মাসে শুলু হওয়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনেও তারা অংশ নিতে পারবে না। এই বার্তা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগী সংগঠন গুলোর নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী নেতারা কোনো ভাবে যাতে কাউন্সিলর ডেলিগেট হতে না পারে সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে নিজের দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। বিভিন্ন ধরণের অপরাধ ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাদ পড়ছেন না এমপি ও প্রভাবাশালী নেতারাও । প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে দেশে বিদশে প্রসংশিত হয়েছে।