নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারলে অর্থায়ন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয়। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আমি মনে করি এসব বালকসুলব কথা না বলাই ভালো।
৭ বছর পর শ্রমিক লীগের সম্মেলন। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেই সকাল থেকে সম্মেলনস্থল সোহরাওয়র্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বেলা পৌনে ১১টায় সভাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় রীতিতে ১২তম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি আছে সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। যার সুফল আজও এদেশের মানুষ পাচ্ছে। আমি বাংলাদেশের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই তারা ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে একটানা আমাদের ক্ষমতায় রেখেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মহল শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয়। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আমি মনে করি এসব বালকসুলব কথা না বলাই ভালো। ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করবে, তাদের শিক্ষার সময় যেনো নষ্ট না হয়। কাজেই উস্কানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেয়া আর মুখরোচক কথা বলা এটা কেউ মেনে নিতে পারে না। আর তাই যদি করতে হয় নিজেদের খরচ নিজেদের চালাতে হবে, সরকার সব খরচ বন্ধ করে দেবে। কারণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পাবলিক দেবে সরকার কেনো খরচ করবে।
শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা কৃষক, শ্রমিক, সরকারি ও বেসরকারি সবাইকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। দ্রুত অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের জন্য তিনি যে প্লাটফর্ম নিয়েছিলেন তাই ছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। যাকে অনেকেই বলে বাকশাল।
তিনি বলেন, সে সময় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রবৃদ্ধি ছিল সাতের উপরে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে চলে গিয়েছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য সে সময়ে এলো চরম আঘাত। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলো। আমরা দুবোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। সেটা যদি চালু হতো তাহলে আমাদের এত পিছিয়ে থাকতে হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলে মানুষ উন্নয়নের সুফলটা পাচ্ছে। মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে। শিল্পায়ন এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই কাজ করেছে। কাজ করে যাবে।
এসময় তিনি তার সরকারের সময় করা শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০, বাংলাদেশ শ্রম নীতিমালা ২০১২, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ১৭০ কোটি টাকার বিমার কথাও উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৪২টি সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের জন্য ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০ টাকায় ৫০ লাখ মানুষকে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো জোহানেস পউটিয়ানে, আইটিইউসি-এপির জেনারেল সেক্রেটারি শোয়া ইয়োশিদা ও সার টুক এর জেনারেল সেক্রেটারি লক্ষণ বাহাদুর বাসনেট।
সম্মেলনে যোগ দেয়া কাউন্সিলররা জানান, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে শ্রমিক লীগ আরও শক্তিশালী হবে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সারাদেশের ৭৮ জেলা শাখা থেকে আসা প্রায় ৮ হাজার কাউন্সিলরের ভোটে শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।