নিজস্ব প্রতিনিধি : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অভিযানে টেকনাফের দমদমিয়ার নাফ নদী সীমান্ত থেকে ২.১১৭ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট ও ১টি কাঠের নৌকাসহ ৪ জন আটক হয়েছে, এ খবর নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ, বিজিবিএমএস।
বর্তমান সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবি’র গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। এরই টেকনাফে বিজিবি’র অভিযানে ২.১১৭ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৪০০ বস্তা সিমেন্ট এবং ১টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকাসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) গতকাল রবিবার ৪ জুন, রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অত্র ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ জালিয়ারদ্বীপ এলাকা দিয়ে নৌকাযোগে মাদকদ্রব্য পাচার হতে পারে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাটালিয়ন সদর এবং দমদমিয়া বিওপি হতে দুইটি টহলদল বর্ণিত এলাকায় গমন করতঃ কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে।
আনুমানিক ২ টা ৩০ মিনিটের সময় বিজিবি টহলদল জালিয়ারদ্বীপের উত্তর দিকে দমদমিয়া এবং হ্নীলা বিওপির মধ্যবর্তী স্থানে সন্দেহভাজন একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকা দেখতে পেয়ে তল্লাশির জন্য থামায়।
নৌকায় আরোহিত একজন মায়ানমারও তিনজন বাংলাদেশী নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নৌকায় থাকা সিমেন্টের বস্তার নীচ হতে ২.১১৭ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য বহণের দায়ে বর্ণিত নৌকা এবং ৪০০ বস্তা সিমেন্টও জব্দ করা হয়।
আটককৃত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইঞ্জিন চালিত নৌকাটি তিনজন বাংলাদেশী নাগরিক মাঝিসহ ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে সেন্টমার্টিন থেকে ভাড়া করে টেকনাফ স্থলবন্দরে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, আকটকৃত মায়ানমার নাগরিক মাদকসহ মায়ানমার থেকে লালদ্বীপ হয়ে টেকনাফ বন্দরে আগমন করে।
উক্ত মায়ানমার নাগরিক টেকনাফ স্থলবন্দর হতে আনুমানিক ৪০০ বস্তা সিমেন্ট নৌকায় লোড করে এবং সিমেন্টের বস্তার নীচে মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রাখে। মাদকদ্রব্য হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে সিমেন্ট নিয়ে মায়ানমারের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, উক্ত মায়ানমার নাগরিকের কাছে একটি ইউনিফর্মের ক্যাপ পাওয়া যায় এবং ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্যাপটি নবী হোসেন গ্রুপের ইউনিফর্মের ক্যাপ। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, উক্ত সিমেন্টের মালিক নবী হোসেন এবং উক্ত মায়ানমারের নাগরিক নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য বলেও অনুমেয়।
আরও উল্লেখ্য যে, টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, টেকনাফ স্থল বন্দরে মায়ানমার থেকে বড় কার্গো বোটের মাধ্যমে যে সকল পণ্য আমদানি করা হয়, সে সকল পণ্য বন্দরে খালাস করার পর পূনরায় উক্ত কার্গো বোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে পণ্য রপ্তানি করা হয়।
কিন্তু টেকনাফ বন্দর থেকে বাংলাদেশী বোটে করে কোন পণ্য মায়ানমারে রপ্তানি করা হয় না। এছাড়া রাতের অন্ধকারে বন্দর থেকে ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকাটি টেকনাফ বন্দরের উত্তর দিকে হোয়াইক্যং এর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
আটককৃত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় ও ঠিকানা যথাক্রমে, জুবায়ের (৩০), পিতা-আব্দুদ, মাতা-রশিদা খাতুন, কুতুপালং এফডিএমএন ক্যাম্প নং-২, এফসিএন নম্বর-১৪২৪৬৪, বাসা নং-১৫, ব্লক এ/১, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার (মায়ানমার নাগরিক), মোঃ সাদেক হোসেন (২৯), পিতা-মোঃ কামাল হোসেন, মাতা-মোছাঃ জবেদা খাতুন, সাং-জালিয়াপাড়া টেকনাফ, ৭ নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা, থানা-টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজার, মো: হামিদুর রহমান (১৯), পিতা-আব্দুর রহমান, মাতা-আমেনা খাতুন, সাং-কোনাপাড়া সেন্টমার্টিন, ৭ নং ওয়ার্ড, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন, থানা-টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজার, এবং মোঃ ইমরান (১৯), পিতা-মোঃ বাবুল, মাতা-মোছাঃ জোসনাহার বেগম, সাং-কোনাপাড়া সেন্টমার্টিন, ৭ নং ওয়ার্ড, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন, থানা-টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজার।
আটককৃত সিমেন্ট এবং কাঠের নৌকাটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ, বিজিবিএমএস, জানান, বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়নের এধরণের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।