নিজস্ব প্রতিবেদক : মঙ্গলবার, ২০ জুন,জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশের সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা কুক্ষিগত করতে পারে না । কারণ, সে সব দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের ক্ষমতার আওতার বাইরে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়, শুধু সবার ইচ্ছে থাকলেই হয়। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইন শৃংখলার সাথে জড়িতদের যেনো দলীয় নেতা-কর্মী বানানো হচ্ছে।
দলীয় গুন্ডাবাহিনী দিয়ে নির্বাচনের কেন্দ্র দখল করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা কুক্ষিগত করে ফেলেছি। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলেই ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশনের হাত-পা সরকারের কাছে বাঁধা। এই কমিশন কারচুপির অভিযোগে গাইবান্ধায় একটি উপ-নির্বাচন বাতিল করেছে। সেই নির্বাচনের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলো অনেকেই কিন্তু কারোরই শাস্তি হলো না। অভিযুক্ত অনেকেই নাকি পুরুস্কৃত হয়েছে। পরবর্তীতে সেই নির্বাচন আবারো হলো ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই। নির্বাচন কমিশনকে অসহায় ও অকার্যকর করা হয়েছে।
আজ বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর কার্যালয় মিলনায়তনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর প্রেস সচিব-০২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী উপস্থিত ছিলেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, প্রতিটি সরকারই নির্বাচন ব্যবস্থা নিজেরে আয়ত্বে রাখতে চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যারাই ক্ষমতায় ছিলো, তারাই আইন পরিবর্তন করে-দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। নির্বাচন এলেই বিরোধীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে। কখনো সেই আন্দোলন সফল হয়েছে, কখনো হয়নি। এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন সফল হবে কিনা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা নিজস্ব আয়ত্বে এনে সরকার গঠন করতে চাইবে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদেশীদের একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যেনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে। বিদেশীদের চাপ সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত কি হয়, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত। তিনি বলেন, যে দলই ক্ষমতায় যায় তারাই ক্ষমতা ভোগ ও অপব্যবহার করে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কথা তাদের মনে থাকে না। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্ন এলেই তারা জনগণের রায় ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে চায়। আমাদের রাজনীতিবিদরা কখনোই স্মরণ করে না যে জনগণই দেশের মালিক, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।
জনগণের কাছে জবাবদিহতিা থাকলে দুর্নীতি, দুঃশাসন, বৈষম্য, অত্যাচার টাকা পাচার ও শোষণ থাকেনা। জবাবদিহিতা থাকলে বরং উন্নয়ণ স্থায়ীত্বশীল হয়, দেশ উন্নত হয় এবং দেশের মানুষ উন্নয়ণের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। ক্ষমতায় গেলেই লাগামহীন ভাবে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণকে তোয়াক্কা করা হয় না। ফলে, নির্বাচন ব্যবস্থা হাতে না নিয়ে নির্বাচন করার সাহস থাকে না তাদের। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্ভাগ্য। তাই, সবাই মিলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সরকারের ক্ষমতার অওতার বাইরে নিতে হবে। এটা পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই করে ফেলেছে। যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন তাদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে একটা জাগরণ তৈরী হয় কিন্তু ক্ষমতায় গেলেই আবার ভুলে যায়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, নেতৃত্বের কারণে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আদর্শ নয়। লোভ-লালসা ও ব্যবসায়ীক দৃষ্টিতে রাজনীতি চলছে। ব্যবসা ও লুটতরাজের জন্য যেনো রাজনীতি। এটা থেকে আমরা বের হতে পারছি না। আমাদের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরাও যেদিকে সুবিধা পায় সেদিকেই চলে। দেশ ও নীতি-নৈতিকতার কথা কেউ ভাবে না। এটা শুধু বর্তমান সরকারের আমলেই নয়, এর আগে যারা ছিলো তারাও একই কাজ করেছে।