যৌন হয়রানি বন্ধে নারীরাই প্রহরীর মতো কাজ করবে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারীর প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধে নারীরাই অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবে বলে নারীদের এক সম্মেলনে অঙ্গীকার করা হয়েছে। শনিবার ঢাকায় ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের’ ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে এই অঙ্গীকার আসে। ‘নারীরাই ক্ষুধামুক্তির মূল চাবিকাঠি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সহস্রাধিক নারী অংশ নেয়।
আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি তাদের এক গবেষণার ফল জানিয়ে বলেন, ৩৯২ জন নারীর মধ্যে জরিপ করে দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার। যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ ৬ বছর বয়সেই হয়রানির শিকার হয়েছে। আর এরা বেশিরভাগ পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
জলি এসময় বলেন, নারীদেরকেই যৌন হয়রানি বন্ধ অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে। আমরা কী সেই অঙ্গীকার করতে পারি?
এসময় উপস্থিত নারীরা হাত তুলে ‘হ্যাঁ’ বলে তাকে সমর্থন জানান। তারা স্লোগান তোলেন- ‘আমরা নারী, আমরাই পারি’।
জলি বলেন, নারীরা এখনও পিছিয়ে আছে। তারা জোরে হাসতে পারে না, কথা বলতে পারে না। আমরা এই জায়গাটার পরিবর্তন চাই। সেলক্ষ্যে কাজ করতে চাই।
সম্মেলনে বাগেরহাটের নারীকর্মী মল্লিকা দাস বলেন, স্বামীরা আমাদের সুন্দর কাপড় কিনে দেবেন আর আমরা ঘরে বসে সেমাই রান্না করবো, তার জন্য আমরা নই। আমরা এখন একা চলতে পারি।
আমরা সবাই একেকজন শেখ হাসিনা হতে চাই। শেখ হাসিনাও সংগ্রাম করে আজকের জায়গায় এসেছে। তিনিও এক সময় গৃহিনী ছিলেন, তিনি পেরেছেন, আমরাও পারব।
সংগঠনের সাবেক সভাপতি রাশেদা আক্তার নারীর প্রতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাসীনতার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নারীর প্রতি সমাজ হিংস্র, পরিবার নৃশংস, রাষ্ট্র উদাসীন। কেন তনুর মত পরিনতি হবে? কেন একজন শিক্ষক তার ছাত্রীর গায়ে আগুন দেবে? আমাদেরই (নারী) এ পরিস্থিতি পাল্টাতে কাজ করতে হবে।
ঝালকাঠির উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরীন বলেন, আমাদের নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করতে হবে। পুরুষরা বলে আমাদের পোশাকে সমস্য, তাহলে তিন বছর বয়সী শিশু নির্যাতিত হয় কেন? সমস্যা পোশাকে নয়, মানসিকতায়। পুরুষের মানসিকতা পাল্টাতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, তৃণমূলের সব নারীর বাগান আছে, তারা কৃষিকাজ করে। পুষ্টির যোগান দেয়। আমরাই করতে পারব।
ময়মনসিংহের আনজু আনোয়ারা বলেন, নারীরা এখন পুরুষতন্ত্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে চলছে। এই আন্দোলন চলছে, চলবে।
অনুষ্ঠানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় কক্সবাজারের শাহান বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক নারী এমপি, মন্ত্রী আছেন, তারা কেন এরকম নারী সম্মেলনে থাকবেন না? মহিলা অধিদপ্তরের নারীদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তেমন কর্মসূচি নেই। এটা করতে হবে।
গাইবান্ধার অঞ্জলি রানী দেবী সম্পত্তির অধিকারের জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধনের দাবী করে বলেন, রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক পুরুষতান্ত্রিক আইন সংশোধন করে সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমার কন্যা যেন তার পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের বিভিন্ন কার্যক্রমে গত দুই বছরে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৫ জন নারী অংশ নিয়েছেন। এসব কার্যক্রমের মধ্যে বাল্য বিয়ে বন্ধ, যৌতুক বন্ধ এবং যৌন নির্যাতন বন্ধের মত কর্মসূচি রয়েছে। দেশের ৪৪ টি জেলায় ২২৯টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে এই সময়।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার, গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ক্যাথি বার্ক, ইউএন ওম্যানের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ শোকো ইশিকাওয়া।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *