নিজস্ব প্রতিবেদক : বুধবার ২৬ জুলাই, সকাল ১১ টায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে অংশীজনের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান (প্রাক্তন উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), মূখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সদস্য কাজী আব্দুল হান্নান এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ, অংশীজন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকবৃন্দ হচ্ছেন সমাজের দর্পন। তাঁদের লেখনিতে সমাজের অসঙ্গতি উঠে আসে। তাঁদের সহযোগিতার ফলে অধিদপ্তরের সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম আরও বেগবান হচ্ছে।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব জান্নাতুল ফেরদাউস।এরপর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মহাপরিচালক কর্মশালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, সিসিএমএস (কঞ্জুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের এই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার যে, বেশি দামে কোন পণ্য ক্রয় করলেও সেটা গুণগত মানসম্মত নাও হতে পারে।
সাংবাদিকবৃন্দের তথ্যের ভিত্তিতে অধিদপ্তর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও সাংবাদিকবৃন্দের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও সাংবাদিকবৃন্দ প্রচারে মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম ও সেবাসমূহ ভোক্তাদের মাঝে তুলে ধরে ভোক্তাদের সচেতনতায় সহযোগিতা করছে।
আলোচনায় মহাপরিচালক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হিসেবে আর্ন্তজাতিক বাজারের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বলেন। তবে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাপরিচালক অধিদপ্তরের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশহিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপাটমেন্ট এর সাথে অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মাস্টার্স অব প্রোফেশনাল (এমপিএম) প্রোগ্রাম চালুর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং অধিদপ্তরের সাথে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ উদ্যোগে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজনের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে মর্মে কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক অংশগ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা-অধিকার আইন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। আলোচনা শেষে মহাপরিচালক ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে ভোক্তা সাধারণকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে তথা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সংশোধন করার কথা বলেন। তাছাড়াও তাঁরা আইনে বিদ্যমান জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে কারাদণ্ড প্রদানের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সদস্য কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, নির্বাহী ব্যবস্থার আওতায় থেকেও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভালো কাজ করছে এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সংশোধন করে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার জোর দাবী জানান।
কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তা অধিকার আন্দোলনকে বেগবান করতে সাংবাদিকবৃন্দের সহযোগিতা প্রযোজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, মানুষের ভোগ বিলাস বেড়েছে কিন্তু পাশাপাশি বৈষম্যও বেড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও ভোক্তাগণ বুঝতে পারছে। সীমিত জনবল নিয়েও এই অধিদপ্তর সাধ্যের বাইরে গিয়ে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে যা প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ রয়েছে। আর এই জন্য আমাদের সকলের সম্মলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
পরিশেষে সেমিনারের সভাপতি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।