নিজস্ব প্রতিবেদক : জঙ্গিবাদে জড়িতদের গ্রেফতারের পর কারাগারে ডি-রেডিকালাইজড (উগ্রবাদের বীজ ঝেড়ে ফেলে দেয়া) করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে এনজিওসহ সব পক্ষকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’ এর সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি বলেন, ২০১৬ সালের পরে দেশে বেশ কিছু অভিযান হয়েছে। আমরা জঙ্গিদের এনকাউন্টার করেছি, ধ্বংস করেছি বলেই এর সুফল এখন ভোগ করছি। কিন্তু বাইরে থেকে আমরা উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করি, মামলা দেই, গ্রেফতার করে জেলে দেই। কিন্তু সেখানে তাদের সংশোধন হচ্ছে না। এ জায়গায় আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আমি এখানে (সম্মেলনে) এ ধরনের কোনো এনজিও দেখলাম না যারা কারাগারে আসামিদের সংশোধনের বা ডি-রেডিকালাইজেসনে কাজ করে। কারাগারে এ আসামিদের ডি-রেডিকালাইজড করতে আপনাদের প্রোগ্রাম নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রিভেনশন ইজ অলওয়েজ বেটার দ্যান কিওর। এ লক্ষ্যে জঙ্গিবাদ বিস্তার বন্ধে এন্টিটেররিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। আপনারা দেখেছেন তারা লিফলেট বিতরণ করছে।
আইজিপি বলেন, যারা জঙ্গিবাদের অভিযোগে কারাগারে যাচ্ছে এবং জামিনে ফিরে আসছে তাদের পুনর্বাসনে পরিকল্পনা করতে হবে। তারা আমাদের সমাজেরই সন্তান। তাদের মূল সমাজে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এছাড়া জঙ্গিবাদ নির্মূলে মোটিভেশনাল কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এ কাজটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে করে ধর্মীয় নেতারা। তাদের বাণী মানুষ খুব সহজে গ্রহণ করে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার করতে বলেছি। এর ফলে যাদের জঙ্গিবাদে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তারা ধর্মের সুষ্ঠু ব্যাখ্যা পেয়ে বিপথগামী থেকে বিরত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যদি আরেকটি হলি আর্টিসানের মত ঘটনা ঘটতো তাহলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেত। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর প্রজেক্টের বিদেশি এক্সপার্টদের ধরে রাখা যেত না। তবে আমরা এ ধরনের কোনো ঘটনা হতে দেইনি।
তিনি বলেন, আমি যখন এন্টিটেররিজম ইউনিটে ছিলাম তখন দেখেছি উগ্রবাদে জড়িত ৯০ শতাংশ আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের। আমরা এদের সঙ্গে কথা বলেছি, অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা বলেছে, শুধুমাত্র তাদের সম্প্রদায়ের বড় হুজুরের কথা শুনবে ও মানবে। আলেমদের একাংশকে তারা ‘কাফের’ বলে মনে করে। তাই উগ্রবাদ রুখতে ধর্মীয় নেতাদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কমিশনার বলেন, আমরা একটা জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি, আমরা জঙ্গিদের ডি-রেডিক্যালাইজেশন করতে পারিনি। এ প্রক্রিয়ায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি। তারা জেলে গিয়েও সংশোধন হতে পারছে না। তবে এটাও সত্য যে জেলে সে সুযোগ সীমিত। তবে আমার বিশ্বাস একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন।