মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানার টাকায় ধনকুবের মুশতাক

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র রাজধানী

মহসীন আহমেদ স্বপন : রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্তর সংলগ্ন জামিয়া বাবুস সালাম, মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানা ঘিরে চলছে হরিলুট। সিভিল এভিয়েশনের চাকরিচ্যুত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মুশতাক হোসেন রতন, তার মেয়ের জামাতা সোহেল এবং ভাগ্নি জামাতা মো. মোবারক হোসেন এরই মধ্যে ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। হরিলুট অব্যাহত রাখতেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের কৌশল নিয়েছেন।
বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা ও এতিমখানায় বর্তমানে ৫০০ জন এতিম গরিব ছাত্র নূরানী, মক্তব থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। সাধারণ জনগণের যাকাত, ফেৎরা, দান ছাড়াও মাদ্রাসা ভবনের কিছু দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে মুশতাক হোসেন রতন আয়-ব্যয়ের হিসেব নিজের কাছে রাখার সুবাদে রক্ষক থেকে ভক্ষক হয়ে ওঠেন।
জানা গেছে, মুশতাক হোসেন রতন মাদরাসার বেশিরভাগ দোকান স্বনামে-বেনামে তার জামাতা, ভাগ্নি জামাতাসহ নিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দেখিয়ে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। পরে সেগুলো বিভিন্ন লোকের নিকট কয়েক গুণ বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটস্থ করেছেন। এছাড়া মসজিদের সম্পত্তিতে মোবাইল টাওয়ার এবং সাইনবোর্ড ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে মসজিদ-মাদ্রাসার নামে আদায়কৃত দানের টাকারও হিসেব নেই। এ খাত থেকেও বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। মুশতাকের লুটপাটের কৌশল তুলে ধরে সংশ্লিষ্টরা জানান, মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে (৬০০০ স্কয়ার ফিট) ৭টি দোকান রয়েছে। মুশতাক পুরো ফ্লোর প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া ও ৩ লক্ষ টাকা জামানত দেখিয়ে মুশতাক হোসেন রতন ২০১০ সালের ১ জানুয়ারী নিজের নামেই ১৫ বৎসরের জন্য লিজ দলিল করে নেন। ৩০ লক্ষ টাকা জামানত নিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার অধিক ভাড়ার শর্তে উক্ত দোকানসমূহ অন্যত্র ভাড়া দেন। একইভাবে মুশতাকের জামাতা মো. সোহেল ও ভাগ্নি জামাই মো. মোবারক একাধিক দোকান দখলে রেখে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিন জনে মিলে ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাদরাসা ও এতিমখানার প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। রক্ষক হয়ে এ ধরনের ভক্ষক হার ঘটনা নজির বিহিন। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে অবৈধ মোতয়ালী ঘোষণা করেছে।
জনৈক নাজমুল আজম প্রিন্স একটি ভূয়া ভাড়াটিয়া দলিল যা তথা কথিত মুতাওয়াল্লি মুশতাককে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার ৫মাস পর সম্পাদন করা হয়েছে। উক্ত ভূয়া চুক্তিপত্র দেখিয়ে নিজেকে দোকানদার দাবী করে। সম্মানিত কাউন্সিলার ও মহানগর উত্তর এর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা ও বানোয়াট খবর দিয়ে এবং মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে তার সম্মানহানীর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, আনিছুর রহমান নাঈম কমিশনার হওয়ার পূর্ব থেকে অত্র প্রতিষ্ঠানের একজন ভাড়াটিয়া এবং নিয়মিত ভাড়া পরিশোধকারী। জামিয়া বাবুস সালাম মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানার মার্কেটে কাউন্সিলার এর কোন প্রকার দখলদারিত্ব নাই। মুলত তিনি চক্রের অপকর্মের সহযোগী না হওয়ায় ক্ষুব্ধ চক্রটি।
রতনের এক্স-ফাইল নিয়েও রয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুর্নীতির দায়ে তাকে সিভিল এভিয়েশন থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চতুর্থ শ্রেণীর এ কর্মচারী বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক। কাওলার শামসুল উলুম মাদরাসার নিকটে ৫কাঠা জমির উপর একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া গাজীপুর শালনা ব্রিজ পার হয়ে বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে ১০কাঠা জমির উপর টিনশেড বাড়ি করেছে। নিজ গ্রাম ভাংরায় আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। রতনের রয়েছে একাধিক গাড়ি। এর মধ্যে তিনটি গাড়ির তথ্য মিলেছে। এগুলো হলো ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৩৫০৯, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭০০৮ ও ঢাকা মেট্রো ঠ-১১-৮৭৮৩। একইভাবে তার মেয়ের জামাতা ও ভাগ্নি জামাতাও রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন।
এ ব্যাপারে মুশতাক হোসেন রতন দৈনিক সকালের সময়কে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন
প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মো. আনিছুর রহমান আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মো. আনিছুর রহমান জানান, পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হওয়ার সুবাদে মুশতাক হোসেন রতন সহযোগীদের নিয়ে মাত্র ছয় বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ৭ কোটি টাকা গড়মিলের তথ্য মিলেছে। তবে সুষ্ঠু তদন্ত করলে আত্মসাতের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, টাকার অভাবে মাদরাসার ছাত্রদের ঠিকমত ভরণ-পোষণ করা যাচ্ছে না। এদিকে ৫ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় মাদরাসার শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অথচ এতিমদের টাকা মেরেই রতন এবং তার সহযোগীরা আয়েশী জীবন-যাপন করছেন। এমনকি এ ঘটনায় থানায় মামলা করায় রতন ও তার সহযোগীরা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করে মসজিদ-মাদরাসা রক্ষা ও আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *