বিশেষ প্রতিবেদক : শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। ক’দিন পর শুরু হবে নতুন বছর। নতুন বছর শুরুর আগে দেখে নেয়া যাক ২০১৯ সালে দেশের আলোচিত সব হত্যাকান্ড। যেসব হত্যাকান্ড দেশের বিবেকবান প্রত্যেক মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রকে।
২০১৯ সালের আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা, এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া ছেলেধরার গুজবে দেশে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগমের রেণু হত্যাকান্ড।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড : ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে গত ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে বুয়েটে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবরার হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। এরপরই ৪ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা।
রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড : গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। হত্যাকা-ের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এরপর তদন্ত করে গত ১ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা : চলতি বছরের ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে যায় নুসরাত। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে সে মারা যায়।
দেশব্যাপী আলোচিত এ মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদ- দেন। আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে সেই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রেণু হত্যাকান্ড : চলতি বছরে ছেলে ধরা গুজবে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনায় মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে গত ২০ জুলাই সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু। তাসলিমা মূলত ওই স্কুলে তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। পরে পিটিয়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাসলিমাকে মারার দৃশ্য ভিড় করে মানুষ দেখছিলেন এবং অনেকে ভিডিও করছিলেন সেই দৃশ্য। কেউ তাকে বাঁচাতে আসেননি।