নিজস্ব প্রতিনিধি (বরিশাল) : চাল, ভোজ্য তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বরিশাল সদর উপজেলাধীন বরিশাল বাজার (ফড়িয়াপট্টি রোড) তদারকি এবং বরিশাল বাজার ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, আজ শনিবার ২৭ জানুয়ারি, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এর নেতৃত্বে বরিশাল জেলার সদর উপজেলাধীন বরিশাল বাজারে চাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি, দৃশ্যমান স্থানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এসময় মহাপরিচালকের সাথে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), ফকির মুহাম্মদ মুনওয়ার হোসেন, বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মনদীপ ঘরাই, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জাবেদ হোসেন চৌধুরী, মো: আবু জাফর মজুমদার, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, মো: রাসেল খান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের, উপপরিচালক, অপূর্ব অধিকারী, সহকারী পরিচালক, ইন্দ্রানী দাস, জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সুমি রানী মিত্র, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, বরিশাল বাজার কমিটির ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিএমপি সদস্য এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এ সময় বরিশাল বাজারের ফড়িয়াপট্টি রোডের চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্য পণ্যের আড়ৎ তদারকি করা হয়। চালের আড়ৎ তদারকিকালে চাল ক্রয় ও বিক্রয়ের পাকা রশিদ, মূল্যতালিকা ও বর্তমান মজুদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। চালের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও গত ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি জানুয়ারি, মাসে সকল চাল অযৌক্তিকভাবে কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা বেশি দরে বিক্রয় করা হয়। মহাপরিচালক চাল ব্যবসায়ীবৃন্দকে চাল ক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ এবং চাল বিক্রির পাকা রশিদ প্রদান করতে নির্দেশনা প্রদান করেন, তিনি যথাযথভাবে দোকানের দৃশ্যমান স্থানে হাল নাগাদ মূল্যতালিকা প্রদর্শন করতে অনুরোধ করেন।
ভোজ্য তেলের আড়ৎ পরিদর্শন কালে মহাপরিচালক তেল ব্যবসায়ীবৃন্দকে খোলা তেলের পরিবর্তে বোতলজাত তেল বিক্রয়ে উৎসাহিত করেন। তিনি আরো বলেন, ড্রামে করে আসা তেল কোন রিফাইনারি হতে এসেছে তা নির্ণয় করা যায় না। তাছাড়া ভোজ্যতেল ভিটামিন এ ফর্টিফায়েড করার যে নির্দেশনা রয়েছে তা খোলা তেলে নিশ্চিত করা যায় না। পাশাপাশি পাম, সুপারপাম ও সয়াবিন তেলের পরস্পর মিশ্রণ করে ভোক্তাসাধারণকে প্রতারিত করার ঝুঁকি থাকে। এসময় পরীক্ষার জন্য বাজার হতে খোলা পাম, সুপারপাম, সয়াবিন তেল ও টিনজাত সরিষার তেলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
পরবর্তীতে সকাল ১১ টায় বরিশাল ফড়িয়াপট্টি এলাকায় দোকান মালিক, চাল ব্যবসায়ীবৃন্দ, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), ফকির মুহাম্মদ মুনওয়ার হোসেন, বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মনদীপ ঘরাই, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জাবেদ হোসেন চৌধুরী, মো: আবু জাফর মজুমদার, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, মো: রাসেল খান, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের, উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী, সহকারী পরিচালক, ইন্দ্রানী দাস, জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সুমি রানী মিত্র, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, বরিশাল বাজার কমিটির ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
মহাপরিচালক সভার শুরুতে সভা আয়োজন ও উপস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কিছু যুক্তি রয়েছে যা দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। চালের মূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চাল কলের মালিকবৃন্দ চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ধানের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দিয়েছেন তা সঠিক নয় কেননা আগের ক্রয়কৃত ধান হতেই চাল উৎপাদন করা হচ্ছে, কৃষকের নতুন ধান তুলতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
আলোচনায় ক্যাব, বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুদক্ষ নেতৃত্বে অধিদপ্তর ভোক্তাসাধারণের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তাগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। তিনি বরিশালের বাজার তদারকির জন্য মহাপরিচালককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মনদীপ ঘরাই বলেন, মহাপরিচালক এর নেতৃত্বে তদারকি করায় ব্যবসায়ীবৃন্দ সঠিক নির্দেশনা পেয়েছে। এরপর কেউ অযৌক্তিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), ফকির মুহাম্মদ মুনওয়ার হোসেন বলেন, এখন চালের ভরা মৌসুম, এসময়ে চালের ঘাটতি হবার কোন কারণ নেই। যেটি হয়েছে তা কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা লাভের চেষ্টা। তবে সরকারের সময়পযোগী পদক্ষেপের কারণে চালের মূল্য কমছে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে কারসাজি করে বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিশেষে মহাপরিচালক বলেন আসন্ন রমজানে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। পাশাপাশি নিত্যপণ্য পরিবহনে ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি বা চাঁদাবাজি হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপস্থিত সকলকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।