নিজস্ব প্রতিনিধি : চাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন বারচালা বাজার ও কাঠপট্টি রোড এলাকায় তদারকি, তদারকি শেষে ঝলকাঠি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভা কক্ষে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা অয়োজন এবং সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসক, ঝালকাঠি এর সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন।
গতকাল সোমবার ২৯ জানুয়ারি, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এর নেতৃত্বে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন বারচালা বাজার, কাঠপট্টি রোড এলাকায় চাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি, মূল্য তালিকা প্রদর্শন, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এসময় মহাপরিচালকের সাথে উপস্থিত ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য অফিসার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের, উপপরিচালক, অপূর্ব অধিকারী, ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, জনাব সাফিয়া সুলতানা, ঝালকাঠি চেম্বারের সভাপতি, মনির হোসেন তালুকদার, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এসময় ঝালকাঠি বাজারের কালীবাড়ি রোডের বারচালা এলাকায় ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের আড়ৎ ও খুচরা বাজার তদারকি করা হয়। চালের আড়ৎ তদারকিকালে চাল ক্রয় ও বিক্রয়ের পাকা রশিদ, মূল্যতালিকা ও বর্তমান মজুদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। মহাপরিচালককে মেসার্স হাওলাদার ট্রেডার্স হতে জানানো হয় অযৌক্তিকভাবে রংপুরের গঙ্গাচরার একটি রাইছ মিল চালের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। মহাপরিচালক মহোদয় ব্যবসায়ীবৃন্দকে চাল ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বাজারের সকল দোকানে দৃশ্যমান স্থানে হাল নাগাদ মূল্যতালিকা প্রদর্শন করতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ভোজ্য তেলের বাজার পরিদর্শনকালে মহাপরিচালক তেল ব্যবসায়ীবৃন্দকে খোলা তেলের পরিবর্তে বোতলজাত তেল বিক্রয়ে উৎসাহিত করেন। তিনি আরো বলেন, খোলা ভোজ্য তেলের ড্রামে কোন রিফাইনারির নাম না থাকায় তেলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তা নিষ্পত্তি করা যায় না। তাছাড়া ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ ফর্টিফাইড করার যে নির্দেশনা রয়েছে তা খোলা তেলে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। খোলা তেলে ভেজাল মিশ্রণেরও ঝুঁকি আছে। পাশাপাশি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ড্রামগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করতে ব্যবহার করা হয়েছে। এটিও জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পরবর্তীতে সকাল ১০ টায় ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাকক্ষে ঝালকাঠি চেম্বার নেতৃবৃন্দ, দোকান মালিকবৃন্দ, চাল ব্যবসায়ীবৃন্দ, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।উল্লেখিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য অফিসার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী, ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সাফিয়া সুলতানা, ঝালকাঠি চেম্বারের সভাপতি, মনির হোসেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। উক্ত সভা সঞ্চালনা করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী।
মহাপরিচালক সভার শুরুতে সভা আয়োজন ও উপস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কিছু যুক্তি রয়েছে যা দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। চালের মূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চালকলের মালিকবৃন্দ চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ধানের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দিয়েছেন তা সঠিক নয় কেননা আগের ক্রয়কৃত ধান হতেই চাল উৎপাদন করা হচ্ছে। কৃষকের নতুন ধান তুলতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
আলোচনায় জেলা প্রশাসক, ঝালকাঠি ফরাহ্ গুল নিঝুম বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, তদারকিকালে ব্যবসায়ীবৃন্দকে ব্যবসা পরিচালনার সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর কেউ অযৌক্তিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, দেশে চালের কোন ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা লাভের চেষ্টা। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিশেষে মহাপরিচালক বলেন, আসন্ন রমজানে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। পাশাপাশি নিত্যপণ্য পরিবহনে ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি বা চাঁদাবাজি হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপস্থিত সকলকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এরপর একই দিন সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঝালকাঠির সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, সিভিল সার্জন, ঝালকাঠি ডাঃ এইচ এম জহিরুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানগণ, মেয়রগণ, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটগণ, ঝালকাঠি জেলাধীন সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক, অপূর্ব অধিকারী ও ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সাফিয়া সুলতানা, জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, কোন ব্যবসায়ীকে ধরা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সরকারের উদ্দেশ্য একটি স্থিতিশীল বাজার প্রতিষ্ঠা করা।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।এরপর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সভায় মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, পুলিশ সুপার, ঝালকাঠি তাঁর বক্তব্যে সভা আয়োজনকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীরও পরিবর্তন করতে হবে। এই সভার মাধ্যমে অংশীজন উপকৃত হবেন। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান ও জেলা প্রশাসনের মেবাইল কোর্টে জেলা পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং সিসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। তিনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ তুলে ধরেন।
আলোচনায় তিনি ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রি-এজেন্ট সহ বিভিন্ন স্যাম্পলের মেয়াদসহ বিভিন্ন সার্ভিসের মূল্যে ভোক্তাসাধারণ প্রতারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের আঠারো কোটি জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
সভাপতি তাঁর বক্তব্যে সভা আয়েজনের জন্য ঝালকাঠি জেলাকে নির্বাচন করায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, সভার উদ্দেশ্য ভোক্তাসাধারণকে সচেতন করা। ভোক্তা অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
মুক্ত আলোচনা পর্বে মহাপরিচালক মতবিনিময় সভায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। এরপর তিনি সভা আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়োজিত সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।