নিজস্ব প্রতিবেদক : “সেবা ও সদাচার, ডিএমপি’র অঙ্গীকার”- এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে নানান আনুষ্ঠানিকতায় জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । গতকাল বৃহস্পতিবার ১ ফেব্রুয়ারি নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আজ সকালে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বিশেষ অতিথিবৃন্দদের সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে প্রতিষ্ঠা দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিন ‘আস্থা’ এবং ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) সম্পাদিত জেলখানায় থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর চিঠিপত্রের সংকলন “লেটারস অব বঙ্গবন্ধু” মোড়ক উন্মোচন করেন ।
স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, ১২টি থানা ও ৬ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আজ ৫০টি থানা ও ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ডিএমপি।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। ডিএমপি অতি দক্ষতার সঙ্গে এসব অপরাধকে মোকাবিলা করেছে। অপরাধ দমনে ক্রাইম বিভাগের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জঙ্গি দমনেও দক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগ জঙ্গিবাদকে সফলতার সঙ্গে দমন করেছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। এছাড়া গুজব ও সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধ ডিএমপি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ডিএমপি ওয়ান স্টপ সাইবার সেন্টার চালু করতে যাচ্ছে।
আইন শৃঙ্খলার পাশাপাশি সামাজিক কাজও ডিএমপি করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে ডিএমপি মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন মরদেহ রেখে পালিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পরম মমতায় সব মরদেহ সৎকার করেছে। কখনো কখনো তারা প্লাজমা দিয়ে রোগীদের সেবা করেছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, যানজট ঢাকা শহরের অন্যতম একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এমন একটি ঢাকা করতে চাই যেখানে উত্তরা থেকে ১৫ মিনিটে গুলিস্তান আসা যায়। সকলের সহযোগীতায় আমরা স্মার্ট ডিএমপি করতে চাই। আমরা এমন একটি ডিএমপি করতে চাই যেখানে একজন নারী রাত তিনটায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে তার যেন মনে হয় তার পিছনে একজন পুলিশ সদস্য আছেন।
তিনি আরো বলেন, অতীতে যারা জঙ্গি নাশকতা সৃষ্টি করেছে, ডিএমপি কঠোর হস্তে তাদের দমন করেছে। বর্তমানে ডিএমপির সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি জঙ্গি ও নাশকতা চালালে ডিএমপি কঠোর হস্তে তাদেরকে দমন করবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি। আগামীতে স্মার্ট ডিএমপি’ গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর।
ডিএমপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৫০টি থানার ৩৪ হাজার জনবল নিয়ে ঢাকায় বসবাস করা নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবল দুই লাখ দশ হাজারের বেশি। সেই হিসেবে একজন পুলিশ ৮২৫ জন মানুষকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল সেজন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছিল। আমরা সাইবার ইউনিট তৈরি করেছিলাম, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তুলেছিলাম, আমরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রের জন্য ট্রাফিক ইউনিট করেছি যা ডিএমপির কমিশনারের অধিনে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আহ্বান করেছিলেন, বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হওয়ার জন্য। আজ পুলিশ সেই জায়গায় এসেছে। জনগণের আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গাটাতে পুলিশ এসেছে। পুলিশ আজ জনগণের বন্ধু।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করার দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখেছেন। তখন কাজ করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেকটা আন্দোলনে ও সংকটে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও বীরত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই আজ বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডিএমপি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একযোগে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতায় প্রত্যেকটি পুলিশ বক্সে টয়লেট, সুপেয় পানি ও বসার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ বক্স করার জন্য দশ কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি পুলিশ বক্স আধুনিক করে দেবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতির পিতার চিন্তা চেতনাকে ধারণ করে ডিএমপি এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন পুলিশ শুধু আজ্ঞাবাহী পুলিশ হবে না, তারা জনগণের সেবক হয়ে জনগণের পাশে থাকবে। এ লক্ষ্যে ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের মুখচ্ছবি হয়ে, জনগণের সেবক হয়ে, জনগণের সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
ডিএমপির ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম বলেন, থানাকে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাই। এক্ষেত্রে ডিএমপির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
ডিএমপি বর্তমানে ৫০টি থানা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট হিসেবে ঢাকাবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নাগরিকদের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন দেশ ও সরকারের দর্পণ তেমনি সকল দিক থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম সফলতা ও ব্যর্থতার দ্বারা অনেকাংশে বাংলাদেশ পুলিশ মূল্যায়িত হয়ে থাকে। এজন্য নগরবাসীর সঙ্গে ডিএমপির সৌহার্দ্য ও সংহতি বৃদ্ধি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সব প্রচেষ্টাই হবে আজকের এই দিনে সকলের প্রত্যয় এবং মূল লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সচিববৃন্দ, বিচার বিভাগের বিচারকবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ, সুশীল সমাজের সম্মানিত প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, সাবেক আইজিপিবৃন্দ ও কমিশনারবৃন্দ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, পুনাক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিগণ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিনোদন জগতের শিল্পীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নেতৃবৃন্দ, ৭১’ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জীবিত পুলিশ সদস্য ও আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।