ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা রাজনীতিতে নিষিদ্ধ!

অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা। এমনকি তারা থাকতে পারবেন না কোনো পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনেও। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করবে সরকার।


বিজ্ঞাপন

নতুন করে কোনো বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধন করতে পারবে না, ইস্যু করা হবে না কোনো ট্রেড লাইসেন্স। রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্যতাও হারাবেন তারা। সামাজিকভাবে কোনো ধরনের সম্মাননা নিতে পারবেন না ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা।


বিজ্ঞাপন

স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের প্রতি এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২০ তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় আইনটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত হওয়া খসড়াটি সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তী ধাপে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।

আইনের খসড়ায় স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও স্বেচ্ছা খেলাপিদের ব্যাপারে ধারা ৩০-এ বলা হয়েছে, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতারা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে কোনো সম্মাননা পাবেন না। রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কোনো ধরনের পেশাজীবী, ব্যাবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির পদেও থাকতে পারবেন না তারা।

একই ধারার উপধারা ৫-এ স্বেচ্ছা খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে বাধার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বেচ্ছা খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুরোধ করলে সরকার এসব ঋণখেলাপির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। গাড়ি ও বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, ‘যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর’-এর কোম্পানি নিবন্ধনের বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে। আর উপধারা ৩ মোতাবেক খেলাপি ঋণগ্রহীতারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ঋণ পাবেন না। উপধারা ২ মোতাবেক খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া আদালতে আবেদন করবে।

ঋণখেলাপিরা এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে উপধারা ৪ মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট খেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারবে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে খসড়া আইনের ধারা ২৬-এর উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশের বেশি সামষ্টিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।

উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানিতে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার অর্জন বা ধারণ করতে পারবে না।

আইনের খসড়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের ব্যাপারে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তিনজন স্বতন্ত্রসহ ১৫ জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ন করা যাবে না। এক প্রতিষ্ঠানে একই পরিবারের দুজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। তার পরও শর্ত থাকে যে তাদের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ারের অধিকারী হতে হবে। আর ন্যূনতম দুই কিন্তু অনধিক ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার না থাকলে ওই পরিবারের একজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।

বিদেশি শেয়ারহোল্ডারের ক্ষেত্রে পরিচালকসংখ্যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি বিধিতে দণ্ডিত হলে কিংবা জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যবিধ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন- এমন কেউ ফাইন্যান্স কম্পানির প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হতে পারবেন না। তিনি নিজে বা তার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে কিংবা আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে তিনি প্রধান নির্বাহী হতে পারবেন না।

একজন পরিচালকের মেয়াদ হবে তিন বছর। একাধারে পর পর তিন মেয়াদে অর্থাৎ টানা ৯ বছর পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। এরপর আরো তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর একই ব্যক্তি পুনরায় পরিচালক পদে মনোনীত হতে পারবেন। এ ছাড়া খসড়া আইনটিতে বিভিন্ন অন্যায়ের ক্ষেত্রে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, স্বেচ্ছা ঋণখেলাপি চিহ্নিত করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংজ্ঞাটি আরো পরিষ্কার করতে হবে। তবে এ আইন পাস হলে সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাত লাভবান হবে। আইনের পাশাপাশি আর্থিক খাতের দৈন্যদশার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *