বিশেষ প্রতিবেদন : কনিকা তেকরিওয়াল জীবনে প্রথম কোন পিচ করতে এসেছেন। বড় কনফারেন্স রুমে সবাই বসে আছে। কনিকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একজন কর্মকর্তা তার দিকে ফিরে বললেন, “ চা, কফি কে কী খাবে একটু জেনে নিন”!!! তিনি ধরেই নিয়েছেন তেকরিওয়াল ঐ অফিসেরইই কেউ। বিব্রত কনিকা নার্ভাস হয়ে সব তালগোল পাকায় ফেললেন!

তারপর তাকে অনেকবার পিচ করতে হয়েছে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতার ১০ বছর পরে ভারতের সেলফ মেইড ধনী তালিকার বয়োকনিষ্ঠ সংযোজন হয়েছেন কনিকা তেকরিওয়াল।

কনিকা ভারতের ‘আকাশের উবার’ নামে খ্যাত ‘জেটসেটগো (JetSetGo)’-এর মূল উদ্যোক্তা ও সিইও। যখন ট্রেড লাইসেন্স করতে যান তখন তাকে সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। কারণ ‘এভিয়েশন’ ব্যবসা করতে হলে তো নিজের প্লেন লাগবে? “আমি তাদের যতোই বুঝাই যে আমি শুধু ট্রেডিং করবো, প্লেন উড়াবো না ততই তারা গো ধরে রাখলো” এক গণমাধ্যমকে কনিকা জানিয়েছে।
কনিকা কলেজে থাকতেই এভিয়েশন সেক্টরে কাজ করতে শুরু করেন। তার কাজ ছিল যারা প্রাইভেট জেটের মালিক তাদের খবরাখবর নেওয়া। কেউ কিনতে চাইলে তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। কনিকা টের পেলেন শুধু মেইনটেইনেন্স আর ফ্লাইটের খরচের কারনে লোকে প্রাইভেট জেট কেনে না। অথচ অনেকই চাইলে ব্যক্তিগত ফ্লাইটে মালদ্বীপ যেতে পারে কিংবা ভারতের মধ্যেই এক জায়গা থেকে আর এক জায়গাতে যেতে পারে।
কনিকা ভাবলেন তিনি তাহলে এই মিলনটা ঘটিয়ে দেবেন – যারা ফ্লাইট চাটার্ড করতে চায় তাদের সঙ্গে চাটার্ড ফ্লাইট অপারেটরদের সংযোট ঘটিয়ে দেবেন। ২২ বছর বয়সে এভিয়েশন সেক্টরের চাকরি ছেড়ে কনিকা এভিয়েশন স্টার্টআপ শুরু করেন। তখন সেটা রেন্টাল সার্ভিসের মতো, কাজ করতো ফোনে ফোনে। কিন্তু কোন ক্লায়েন্ট যোগাড় করা গেল না।
শুরুর কিছুদিন পরেই কনিকার শরীরের কর্কট রোগ ধরা পড়ে, সেকেন্ড স্টেজ। চিকিৎসক বললেন – খুব বেশিদিন বাঁচবেন না। “৪০ তম জন্মদিনে এসে আপনার সঙ্গে দেখা করবো” – চিকিৎসককে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এক বছর পরে সুস্থ হয়ে আবার শুরু করেন তার প্রচেষ্টা। শরীর ঠিক রাখার জন্য ততোদিন নিজেকে ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবেও তৈরি করে ফেলেছন।
মাত্র ৫৬০০ রূপী পকেটে নিয়ে শুরু হয় জেটসেটগো। প্রথম ৬ মাস একজন ক্লায়েন্টও পেলেন না। কিন্তু দমে গেলেন না। ধার-দেনা করলেন। এসময় কো-ফাউন্ডার হিসেবে যুক্ত হয় চাটার্ড একাউন্টেন্ট সুধীর পার্লা। এর মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লোকজনকে প্রাইভেট প্লেন কেনার পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। খুঁজে বের করলেন কোন কোন প্রাইভেট জেটের মালিকরা তাদের বন্ধুবান্ধবকে প্রাইভেট জেটের সুযোগ দেন! তারপরই তার দিন ঘুরতে শুরু করলো।
১০ বছর পরে কনিকা তেকরিওয়াল এখর ভারতের কনিষ্ঠতম সেল্ফ মেইড মহিলা ধনীদের তালিকাতে ঢুকে পড়েছেন। কটক হুরুন তালিকা অনুসারে ১০টি জেট বিমানসহ তাঁর সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪২০ কোটি রুপী।
যারা কোন সমস্যা সমাধান করেন তাদের গল্পগুলো এরকম। এদেরই একদল সৃষ্টি করেন বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ। হয়ে ওঠেন অন্যদের প্রেরণার উৎস। (ফেসবুক থেকে নেওয়া)