যশোর প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগরে পুলিশি হেফাজতে আফরোজা বেগম নামে একজনের মৃত্যু ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার গঠিত ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর ই আলম সিদ্দিকীকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘খ’ সার্কেল জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও যশোরের কোট ইন্সপেক্টর রুখসানা খাতুনকে ওই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
গত ২ জুন রোববার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় আফরোজা বেগমের। এর আগে গত ১ জুন শনিবার রাতে ইয়াবাসহ তাকে তার নিজ বাসা থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় অভয়নগর থানা পুলিশ । আফরোজা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের নর্থবেঙ্গল এলাকার আব্দুল জলিল মোল্লার স্ত্রী।
২ জুন পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগমের মৃত্যু হলে পরিবারের পক্ষে তার ছেলে মুন্না ও এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন, পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছেন তিনি। আফরোজা ও তার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাক দাবি করেছিল পুলিশ। এমনকী বাড়ি থেকে ইজিবাইক বিক্রির এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে আসে এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত আভিযানিক টিম।
অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম আকিকুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত ১টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে অভয়নগর থানা পুলিশ আফরোজা বেগমকে আটক করে। এসময় তার কাছে ৩০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। অভিযানে উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এএসআই মিলন, এএসআই শামসুল হক এবং কনস্টেবল রাবেয়া খানম ছিলেন। আটকের পর আফরোজাকে নারী হাজতে রাখা হয়।
পরদিন রোববার সকালে তিনি অসুস্থ হলে ৯টার দিকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার চিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থতাবোধ করেন। এরপর সকাল পৌনে ১০টায় আবার তিনি অসুস্থতাবোধ করলে ফের তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাজারহাট পৌঁছালে তিনি মারা যান। রোববার আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। সোমবার বিকেলে এই মৃত্যু সংক্রান্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষে জানানো হয়েছে।
এদিকে, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের নির্যাতনে আফরোজার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আফরোজার স্বামী আব্দুল জলিল মোল্লা জানিয়েছেন, তিনি মাদকের ব্যবসা করলেও অনেক আগেই ওই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তারপরও অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তার স্ত্রী কখনো মাদকের কারবার করেননি। একটি মহলের ইন্ধনে তাকে মাদক কারবারি সাজিয়ে ইয়াবাসহ আটক দেখানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।
নিহতের বড়ভাই নূর ইসলাম হাওলাদার জানিয়েছেন, তার ছোট বোন আফরোজা খুব ভালো মানুষ ছিলেন।
গত শনিবার গভীর রাতে অভয়নগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ তার বোনের নর্থবেঙ্গল রোডের বাসা থেকে কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই ধরে নিয়ে যান।
গতকাল রোববার প্রথমে সকাল ৯টার দিকে ও পরে সাড়ে ১০টার দিকে মোট দুইবার পুলিশ বোনকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমবার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বললেও পুলিশ সেটা না করে তাকে থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এরপর ১১টার দিকে চিকিৎসার অভাবে মারা যায় আফরোজা বেগম।