সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : এক সময়ে স্বর্ণ চোরাচালনের সাথে জড়িত এবং নারী পাচারকারী হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত এবং নারী পাচারকারী মামলার আসামী হিসাবে জেল-হাজত ভোগকারী সাতক্ষীরার চৌবাড়ীয়া গ্রামের মৃত রাজ্জাক সরদারের ছেলে মহিউদ্দীনের নানামুখি অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি নিজেকে স্থানীয় জামায়াতের রোকন বলে পরিচয় দেন।
এই মহিউদ্দীন ভুয়া জমির উপর অর্থাৎ তার দাদার রক্ষিতার নামে প্রদত্ত জমির উপর স্থাপিত চাউলের মিলের বিপরীতে সুদের বিনিময়ে ব্যাংক লোন গ্রহনকালে মটগেজ হিসাবে তার পৈত্রিক সম্পত্তির দলিল দাখিল করেন। তার আপন ছোট ভাইয়ের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে জমি লিখে নিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা লোন নেন। তার আপন ছোট ভাই মরহুম জয়লনাল সরদার এলাকায় নিরীহ ও ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
মৃত জয়নাল তার ভাই মহিউদ্দীন সরদারের অপকর্মের কারণে বিভিন্ন মামলায় আসামী হওয়ায় একবার পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর জেল হতে মুক্তি পাওয়ার পরে তার জমি ফেরত দেয়ার জন্য বললে মহিউদ্দীন তার উপর মানসিক চাপ সৃষ্ঠি করেন। এক পর্যায়ে ডাক্তারের নিকট যাওয়ার পথে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। আজ পর্যন্ত লেবাসধারী প্রতারক মহিউদ্দীন তার ভাইয়ের জমি লিখিতভাবে ফেরত প্রদান করেন নি।
মহিউদ্দীন বিগত ০২/০৫/২৪ ইং তারিখে তার চাচাতো ভাই আজিজুর রহমান বাবলু ও তরিকুল ইসলামের নামে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সাতক্ষীরায় ফৌ:কা:বি: আইনের আওতায় ১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলাটি সাতক্ষীরা থানার এ এস আই মো: শরিফুল ইসলাম তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন এবং সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, “বাদীর আরজি বর্ণিত ঘটনার কোন সত্যতা নেই”।
মহিউদ্দীনের জ্ঞাতি গোষ্ঠির প্রায় সকলের সংগে তার জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলা চলছে। মহিউদ্দীন ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বা কাগজপত্র সৃষ্ঠি করে অন্যের জমি নিজের নামে নামজারী/মাঠ পর্চা করা, খতিয়ান পরিবর্তন করা, মাঠ জরিপ নিজের নামে দেখান সহ এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করেন নি।
বর্তমানে তিনি গ্রামের নিরীহ অশিক্ষিত প্রায় ১০-১২ জনের জমি জোর পূর্বক ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্ঠির মাধ্যমে দখল করে ভোগ করে যাচ্ছেন। তার এ সকল অনৈতিক কাজ কর্মের জন্য স্থানীয় জামায়াত তাকে দল হতে বহিষ্কার করেছিল এবং সেটি এখনও বলবৎ আছে। কিন্তু বিগত ৫ই আগষ্ঠ ছাত্র-জনতার সফল আন্দেলনের ফলে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজেকে জামায়াতের বড় নেতা পরিচয় দিয়ে গ্রামের সহজ সরল লোকদের বিভিন্ন মামলার ভয় দেখাচ্ছেন এবং স্থানীয় আওয়ামীপন্থীদের নিকট হতে গোপনে চাঁদা আদায় করছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নিজেকে দায়মুক্তি দেখানোর জন্য নিজের ভাই পুলিশের নির্যাতনের কারণে মারা গেছে এবং পুলিশ অফিসার সহ কিছু নিরীহ ব্যক্তির নামে মামলা করবেন মর্মে বলে বেড়াচ্ছেন।
যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করবেন মর্মে বলে বেড়াচ্ছেন তারা ঐ সময়ে সাতক্ষীরা থানায় কর্মরত ছিলেন না। বিভিন্ন লোক জনের মাধ্যমে তাদের খবর দেয়া হচ্ছে এবং মোটা অংকের টাকা দাবী করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, তার বড় ছেলের শ^শুর ডিসি অফিসে পিয়নের কাজ করতেন এবং আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
তার মাধ্যমে তিনি এলাকার লোকজনদের হুমকি দিতেন বা ক্ষতি করতেন। তার আরেক ছেলে রুবেল চায়নায় থাকত এবং সেখান হতে অবৈধ পন্থায় হুন্ডির ব্যবসা করত বলে গুঞ্জন রয়েছে। সে এখনও অবৈধ মাল আমদানী ও হুন্ডির ব্যবসার সাথে জড়িত। অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ব্যাংক লোন পরিশোধ সহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন যা দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করলেই প্রমানিত হবে।
স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সংগে আলাপকালে জানা যায়, মহিউদ্দীন পূর্ব হতেই ধুরন্ধর ও মামলা বাজ প্রকৃতির লোক। তিনি বিগত ১/১১ এর সময় কিছু দূষ্কৃতকারীদের সাথে নিয়ে এলাকায় তান্ডব চালিয়ে ছিলেন।
ঐ সময় সরকারী রাস্তার পাশে বড় বড় গাছ কেটে এবং ভিন্ন মতালম্বীদের বাড়ী-ঘর লুটপাট করে জামায়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন।
এবারও তিনি একইপন্থা অবলম্বন করছেন। এলাকাবাসী আরো জানায়, মহিউদ্দীনের কোন কাজের সাথে বর্তমানে কোন জামায়াত নেতা বা কর্মী সম্পৃক্ত নন। স্থানীয় কোন জামায়াত নেতা তার এ সব অনৈতিক কাজের সমর্থনও করেন না।
এলাকাবাসী বহু অপকর্মের নায়ক কথিত এই জামায়াত নেতা মহিউদ্দিনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী তুলেছেন। এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।