নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম সাইজুদ্দিন আহম্মেদ।শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান-মার্কেট দখল ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন বিএনপির এই নেতা।বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লিয়াজো করে গড়ে তুলেন অপরাধ সম্রাজ্য, ও নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।ক্ষমতা পরিবর্তনের পর এখন অনেকটাই বেপরোয়া তিনি।সাইজুদ্দিনের ও তার লোকজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি পরিবার।
জানা গেছে ২০০৪ সালের ১৩ মার্চ গাজীপুর জেলা ছাত্র দলের যুগ্ন সম্পাদক সাইদুর রহমান স্বপন বকশীকে প্রকাশ্যে হত্যা করে আলোচনায় আসেন সাইজুদ্দিন আহম্মেদ।দীর্ঘদিন কারাভোগ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতে থাকেন তিনি।
২০২২ সালে ভাগিয়ে নেন কালিকৈর পৌর বিএনপির যুগ্ন সম্পাদকের পদ। এক দিকে বিএনপির পদ,অন্য দিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে গড়ে তুলেন অপরাধ সম্রাজ্য,নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসন ও নির্যাতনে বিএনপি নেতারা যখন ঘরবাড়ি ছাড়া,তখন সাইজুদ্দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করে চালাতে থাকেন ঝুট ব্যবসা,গুদাম দখল সহ নানা অপকর্ম।
গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাইফুদ্দিন আহম্মেদ।৬ আগষ্ট চান্দনা সাহেব পাড়া এলাকার জহিরুল হক জনির বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করে, ঘর থেকে টাকা ও স্বর্নালংকার লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন জনি।সেই থেকে ২ মাসের বেশি সময় বাড়িছাড়া জনি ও তার বৃদ্ধ মা,প্রান ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কালিয়াকৈর থানা, এবং গাজীপুর সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে জনির মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,বাড়ি ও জায়গা আমাদের।সাইজুদ্দিন জোর করে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভাঙচুর করে টাকা-পয়সা সব নিয়ে গেছে।আমরা পরিবার নিয়ে ঘর ছাড়া।এখন আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।
উপজেলার সফিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের,প্রায় ৪০ বছর ধরে সফিপুর বাজারে সরকারি দোকান ইজারা নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। ৫ আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর তার দীর্ঘদিনের সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দখল করে নেন সাইজুদ্দিন। এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে একই বাজারের আরও চার ব্যবসায়ীর দোকান দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া তার অনুসারী, কর্মীরা পূর্ব চান্দরা বোর্ডমিল ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় বনের জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এসব এলাকার বাজার গুলো থেকে তারা চাঁদা তুলছেন। পূর্ব চান্দরার বোর্ডমিল এলাকায় ক্লাব ঘর নির্মানের নামে বনের জমি দখল ও বাসা বাড়ি নির্মানের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সাইজুদ্দিনের ভাগিনা তরিকুল ইসলাম বলেন,অনেকেই বনের শত বিঘা জমি দখল করেছেন,মামা তো সামন্যই করেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি সাইজুদ্দিন।
আনসার একডেমির ৩ নম্বর গেইটের বিপরীতে ৩২ শতাংশ জমিতে থাকা খালেক সুপার মার্কেট দখল করে দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখানে নিজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।যার বাজার মুল্য ৪ কোটি টাকা।
বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান,বিএনপির পদে থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড করছেন সাইজুদ্দিন। তিনি ও তার অনুসারীদের কারনে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মীরা হতাস।
এমন কর্মকান্ডের কারনে জনপ্রিয় দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা.মাজহারুল আলম বলেন,দলেয় পদে থেকে অপকর্ম করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে তারক রহমানের পরিষ্কার বার্তা রয়েছে- কেউ অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাইফুদ্দিনের বিষয়টি আমার কানে এসেছে, দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযোক্ত সাইফুদ্দিনের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলে বলেন কোর্টে গিয়ে খোজ নেন,স্পটে গিয়ে দেখেন,প্রতিবেদককে কিছুটা এরিয়ে দ্রুত ফোন কল কেটে দেন।