বিতরণ কোম্পানিগুলোর বাড়তি অর্থ আদায়ে বিইআরসি’র বাধা

অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দাম আর ভ্যাটের বাইরে গিয়ে সময়ে সময়ে নানা অজুহাতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করছিল তাতে বাদ সেধেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এবার দাম বৃদ্ধির আদেশের সঙ্গে বিইআরসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কমিশন নির্ধারিত নয় এ ধরনের কোনও অর্থ গ্রাহকের কাছ থেকে বিতরণ কোম্পানি আদায় করতে পারবে না। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আদেশের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে নির্দেশনা দেয় কমিশন।
যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলছেন, কমিশন নেওয়া যাবে না বলে আদেশ দিলেও তো হবে না, যারা আদায় করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এই কাজ যেন বন্ধ হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর যারা এতদিন নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নেওয়া যাবে বললে তো আর প্রতিকার হয় না। আমরা প্রতিকার চাই। তিনি বলেন, কমিশন এর আগেও বলেছিল, কিন্তু তারপরও তো এসব বন্ধ হচ্ছে না।
অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন প্রি পেইড মিটার বসানোর আগে তাদের বিদ্যুতের বিল কম আসতো, এখন বেশি আসছে। কেউ বলছেন, মিটার ভাড়া বাবদ প্রতিমাসেই একটা নির্দিষ্ট টাকা কেটে নেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, এই ভাড়ার পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। প্রিপেইড মিটারের কার্ড রিচার্জের সময় প্রতিবারই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। অনেক গ্রাহক জানান, তারা বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেও সেসবের কোনও সমাধান পাননি। তাই অনেক গ্রাহক কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কাছে অভিযোগ জানান। গ্রাহকদের অভিযোগগুলো ক্যাব বিইআরসির কাছে লিখিতভাবে জানায়।
এর বাইরেও এখন বিদ্যুৎ বিতরণে গ্রাহকের আঙিনায় কোনও রকম ত্রুটি দেখা দিলে বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কারের অর্থ দাবি করে। বিতরণ কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে এজন্য একটি অর্থ নির্ধারণ করে দিলেও এর থেকে বেশি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
বিইআরসিকে পাঠানো চিঠিতে ক্যাব জানায়, বিদ্যুতের মূল্যসহ আনুষঙ্গিক চার্জ গণশুনানির ভিত্তিতে বিইআরসি পুনঃনির্ধারণ করে। এ পুনঃনির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গণশুনানির ভিত্তিতে বিইআরসি বিদ্যুতের মূল্য ও অন্যান্য চার্জ পুনঃনির্ধারণ আদেশ দেয়। তারপর আর কোনও আদেশ হয়নি। তাহলে বাড়তি অর্থ আদায় কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে?
চিঠিতে বলা হয়, কোনও আবাসিক গ্রাহক যদি কোনও মাসে ১০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাহলে তার বিদ্যুতের বিল হবে ৬৩ টাকা (এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩.৫০ ধরে ১০ ইউনিটের দাম ৩৫ টাকা+ডিমান্ড চার্জ ২৫ টাকা+ ভ্যাট ৩ টাকা)। এর বাইরে কোনও অজুহাতেই ভোক্তার কাছ থেকে কোনও অর্থ আদায়ের সুযোগ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির নেই। অথচ এজেন্টের কমিশন, মিটারভাড়া, ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের বিপরীতে সুদ, মাদার মিটার সংযোগ ভাড়া, মিটারের লক খোলার জন্য অর্থ জমা এমন অজুহাতে ভোক্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।
এদিকে গতবছরের ২৮ নভেম্বর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো নানাভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলমও বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। ক্যাব চিঠি দেওয়ার পরও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করে ক্যাব।
এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কমিশন। একইসঙ্গে আরও কিছু আদেশও জারি করে সংস্থাটি। তাতে কমিশন জানায়, বিইআরসি’র আদেশের বাইরে অতিরিক্ত কোনও অর্থ আদায় করতে পারবে না বিতরণ কোম্পানিগুলো।
প্রসঙ্গত, কমিশনের আদেশে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে শুধু ডিমান্ড চার্জ নেওয়া যাবে বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, বর্তমানে প্রি-পেইড মিটারের বিল পেমেন্টে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়, প্রি-পেইড মিটার আনলক করার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে বলে কমিশনের কাছে গণশুনানিতে অভিযোগ উঠেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই উদ্যোগ নিলো।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *