নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে ভারত সরকার সব দেশের ভিসা স্থগিত করেছে। ভিসা স্থগিতের পর পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চলাচলও সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারতীয় ইমিগ্রেশন। তবে ভারতের ভিসা স্থগিতের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে। স্থলপথে ভারতে যাওয়ার অন্যতম পথ বেনাপোল স্থলবন্দরে এখন উপচেপড়া ভিড়। যাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল বা বিভিন্ন প্রয়োজনে টিকেট কেটে রেখেছিলেন তারা ভিড় করেছেন বেনাপোল সীমান্তে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকাল ৯টা পর্যন্ত যাত্রীদের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। ভারতের অংশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার যন্ত্রাংশ অচল থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকাল থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে ভারত থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার বহির্গমন সিল দেওয়া হবে না। বুধবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। নতুন করে ভারত সরকার ভিসা স্থগিত করায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনও পাসপোর্টযাত্রী। তবে কূটনৈতিক, অফিশিয়াল, জাতিসংঘ/আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এ বিধি নিষেধের আওতায় পড়বে না বলে তারা জানিয়েছেন। এছাড়া যেসব যাত্রী ভিসা নিয়ে ভারতে অবস্থান বা চিকিৎসা করতে গেছেন তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে পারবেন।
চিকিৎসার জন্য ভারতগামী যাত্রী নিয়ামত বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে থেকে শুনছিলাম করোনার কারণে ভারতে যাতায়াত বন্ধ হবে। এ কারণে আমি বন্ধ হওয়ার আগেই যাচ্ছি। কিন্তু ভারত অংশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে হয়রানির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজম্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, ভারতের অংশে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্র অচল থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে যাত্রীরা যাতে দ্রুত যেতে পারেন এর জন্য তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। এ পথ দিয়ে ১৩ মার্চ বিকাল থেকে ভারত ভ্রমণে বিদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আপাতত স্বাভাবিক আছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি (তদন্ত) মহাসিন হোসেন জানান, ‘বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকালে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে লেখা আছে শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টা থেকে নতুন করে কোনও পাসপোর্টধারী যাত্রী গ্রহণ করা হবে না। যে সমস্ত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে ঢুকে আছে তারা ইচ্ছা করলে বেরিয়ে যেতে পারবে। আর ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী যারা বাংলাদেশ আছে তারা ফিরে আসলে তাদের গ্রহণ করা হবে। নতুন করে কোনও পাসপোর্টধারী যাত্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। যা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, নতুন করে কোনও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে না এমন একটি চিঠির খবর শুনেছি। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধের কোনও চিঠি বেনাপোল কাস্টমসকে দেওয়া হয়নি। যদি এরকম কোনও নির্দেশনা আসে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রী যাতায়াত চলাচল বন্ধ থাকলেও আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধের কোনও আদেশ আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের সঙ্গে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার টুরিস্ট ভিসা প্রদান স্থগিত করলেও আগের ভিসায় দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুদেশের মাঝে যাত্রীরা নির্বিঘেœ আসা-যাওয়া করতে পারছেন। শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে বলে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ওসি সেকেন্দার আলী বলেন, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ভারতের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছে, শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রাখবেন। এর পর যাত্রী পারাপার বন্ধ হবে। তবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি যাত্রী ও বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় যাত্রীরা নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারবেন।