অসুখ সৃষ্টিকারী ওষুধ

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র রাজধানী স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : ওষুধে অসুখ সারে এই কথাটাই যেন অসার মিটফোর্ডের একদল দুর্বৃত্তের কাছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করে আসছিল অসুখ সৃষ্টিকারী নানা ধরনের নকল ওষুধ। বিশেষ করে নারীদের বহুল ব্যবহৃত আইপিল ও কথিত যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ভায়াগ্রা। এসব ওষুধ চলে যেত বিভিন্ন ফার্মেসিতে। আসল ওষুধের আড়ালে চলত অবাধ বিক্রি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হানা দেয় ওই দুর্বৃত্তদের ডেরায়। অভিযান চালানো হয় নকল ওষুধ তৈরির কারখানায়। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ। যেসব ওষুধ জব্দ করা হয়েছে সেসবের আসল ওষুধের মূল্যের হিসাবে গায়ের মূল্য দাঁড়ায় অন্তত পাঁচ কোটি টাকা।
ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভনিরোধ পিলগুলোতে এমনিতেই নারীস্বাস্থ্যে এক ধরনের প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে নকল ওষুধ সেবনের ফলে নারীস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর যৌনক্ষমতা বৃদ্ধির নামে যেসব নকল ওষুধ (ভায়াগ্রা) তৈরি করা হচ্ছিল তাতে অনেকেরই চিরতরে প্রজননক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকার সুরেস্বরী মার্কেটে গত বুধবার গভীর রাতে শুরু হওয়া এই অভিযান চালানো হয় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত। নকল ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের একজনকে আটক করা গেলেও পালিয়ে গেছে চক্রটির অন্য সদস্যরা। অভিযানে জব্দ করা হয়েছে নি¤œমানের বিপুল মাস্কও। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদ।
এর আগে মঙ্গলবার একই মার্কেটের অন্য একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার কারণে দুটি গোডাউন সিলগালা করেছিল র‌্যাব। কিন্তু সেই সিলগালার তালা ভেঙে গোপনে মালামাল সরিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় বাবুল নামের এক ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।
সারওয়ার আলম বলেন, অভিযানে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ ও নকল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নামিদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে মানহীন, নকল, নিম্নমানের ও আমদানি নিষিদ্ধ এসব ওষুধ রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে সরবরাহ করা হতো। তাই এগুলো জব্দ করে গোডাউন মালিকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা চাই না, এই ধরনের নকল ওষুধ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
র‌্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ওষুধ জব্দের পাশাপাশি অভিযানে কিছু নিম্নমানের মাস্কও পাওয়া গেছে। তবে অভিযান শুরুর আগেই এখানে কর্মরত আটজন পালিয়ে যায়।
সারওয়ার বলেন, অভিযানে একটি কারখানা থেকে নকল আইপিল কিংবা ভায়াগ্রা জব্দ করার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এমন ক্রিম থেকে শুরু জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন নামি ব্যান্ডের ওষুধও পাওয়া গেছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নকল এসব ওষুধ বাজারজাত করে আসছিল। এসব ওষুধ সেবনে মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, ভায়াগ্রা বা আইপিল খোলার পর একটা হার্ডনেস ভাব থাকে। কিন্তু এখানে জব্দ করা ওষুধ খোলামাত্র গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেছে। এগুলো যে কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেটিও আমাদের জানা নেই। এসব ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে অনেক ধরনের রোগবালাই তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশে যৌনক্ষমতা বর্ধনকারী কোনো রকমের ওষুধ বিক্রির অনুমোদন নেই জানিয়ে ওষুধ প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কোনো ওষুধ কোম্পানিরও এই ধরনের ওষুধ তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে এক শ্রেণির মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু চক্র এই ধরনের নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। এসব ওষুধ সেবনে যৌনশক্তিও কমে যায়। এ ছাড়া শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।
অন্যদিকে দেশের হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানিকে আইপিল বা গর্ভনিরোধ তৈরির অনুমতি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে হারুন উর রশিদ বলেন, নকল আইপিলে জন্মনিয়ন্ত্রণ তো রোধ হয়ই না, উল্টো ওই ওষুধ সেবনকালে গর্ভসঞ্চার হলে নবজাতকের বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *