নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল।

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি চাকুরি বিধি তোয়াক্কা না করে ”বিশেষ ব্যবস্থায়” গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা নগর গণপূর্ত বিভাগের সদ্য বদলিকৃত সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই ঢাকায় অবস্থান করেছেন । অদৃশ্য কারনে বদলির বিধান তার ওপর প্রযোজ্য হয়নি।

সূত্রমতে, প্রতি বছর শতাধিক প্রকৌশলী-কে দেশের বিভিন্ন জেলায় বদলী করা হলেও অজ্ঞাত কারণে স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলকে ঢাকার বাইরে কোন জেলায় বদলী করা হতো না।
জানা গেছে, তিনি ২০০৪ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারি প্রকৌশলী পদে চাকুরী লাভ করেন। এরপর তিনি প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর সুপারিশে ঢাকাতেই পোষ্টিং পেয়েছেন। দলীয় লবিং এর মাধ্যমে সুবিধাজনক জায়গায় পোষ্টিং বাগিয়ে নেন।
এক পর্যায়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে লোভনীয় বিভাগ ও জোনে পদায়ন নিয়ে বিগত ৬ বছর ধরে দু’হাতে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন।
গণপূর্তের দুর্নীতির আকর খ্যাত স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ত্রণালয়ের বড়কর্তা হাতে থাকায় ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন। উপ-সহকারি প্রকৌশলী, সহকারি প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের বদলী ও পদায়নে তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করতে থাকেন। শুরু করেন বদলী বাণিজ্য। এছাড়া,ঠিকাদারদের নিয়ে গড়ে তোলেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট।
তিনি কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও মেরামত কাজ বন্টনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিনি অল্প দিনেই শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, গত প্রায় এক বছর পুর্বে সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের ইচ্ছায় ঢাকা নগর গণপূতের্র নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।
ঢাকা জোনের সবগুলো বিভাগের মধ্যে ঢাকা নগর গণপূর্ত বিভাগ হলো সব থেকে লোভনীয় স্থান। এই পদে পদায়ণ পেতে কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতেও নির্বাহী প্রকৌশলীরা দ্বিধা করেন না।
লোভনীয় এই ঢাকা সিটি ডিভিশনে যোগদান করেই তিনি বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত অর্থের টেন্ডার আহ্বান করে সরকারি টাকা লুটপাটের আয়োজন করেন। গত ২০২৩ – ২৪ অর্থ বছরে তার ডিভিশনে বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু তিনি ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নির্বাচন, কাজ বন্টন ও চুক্তিবদ্ধ করে ২০ থেকে ৩০% পর্যন্ত কমিশন গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া, মেরামত কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রকার কাজ না করেই কেবলমাত্র খাতা কলমে সব ঠিক রেখে ঠিকাদারদের সাথে ভাগাভাগি চুক্তিতে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ নিজ পকেটে পুরেছেন। গত অর্থ বছর ও চলতি অর্থ বছরের মেরামত কাজের টেন্ডার ফাইলগুলো নিরীক্ষা করলেই এসব অপকর্মের প্রমাণ মিলবে বলে দাবী করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার দায়িত্বে থাকাকালে ঢাকা নগর গণপূতের্র নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল প্রায় সময়ই সচিবালয়ে অবস্থান করতেন। তাকে বেশিরভাগ সময়েই নিজ অফিসে পাওয়া যেতো না। সচিবের একান্ত লোক হিসাবে তার সুপরিচিতি ছিলো। তিনি তদবীর নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকতেন।
তিনি গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীকেও পাত্তা দিতেন না। নিজের ইচ্ছা খুশি মত অফিসে আসতেন আবার বেরিয়ে যেতেন। দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে প্রধান প্রকৌশলী তাকে বহুবার মৌখিক সতর্ক করেছেন কিন্তু তিনি তা কর্ণপাত করেনি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানাগেছে, স্বর্ণেন্দু শেখর অর্জিত সব টাকাই হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন। বিশেষ করে ভারতে তার বাড়ী, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অগাধ সম্পদ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক স্বর্ণেন্দু শেখর ও তার পরিবারের সদস্যদের; জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে অনুসন্ধান করলে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টগণ মনে করছেন।
তথ্যমতে, সার্ভিস রুলস ভংগ করে কোন কর্মকর্তা যদি দীর্ঘ সময় একই জেলা বা বিভাগে কর্মরত থাকেন তবে তিনি বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হবেন। এমন কি তার চাকুরীও চলে যেতে পারে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এমন আশংকার পেক্ষাপটে ও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর স্বর্ণেন্দু শেখর স্বেচছায় দুই মাস পূর্বে গোপালগঞ্জে বদলি হয়েছেন ।
গোপালগঞ্জে বদলি হয়েই তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সমার্থক ঠিকাদারদের নিয়ে বর্তমান অন্তবর্তীনকালীন সরকার উৎখাতে এক গভীর ষড়যন্ত্রের রূপরেখা তৈরি করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সমার্থকদের পূনর্বাসনের কূটকৌশল অবলম্বন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্যে স্বর্ণেন্দু শেখর এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়, যে কারণে তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।