খাদ্যের অভাব নেই মজুদ করবেন না

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে খাদ্য সংকট হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনায় আতঙ্কিত হয়ে খাবার জিনিস কিনে মজুদ করবেন না। শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। উহানে ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে ১৭০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে সাড়ে ১১ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশেও করোনা শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২০ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সংকট তৈরি হতে পারে এজন্য মানুষ বেশি করে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করায় কয়েকদিনের ব্যবধানে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।
শনিবার ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার কারণে দেশের জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, দেশে এক বছর চলার মতো পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আতঙ্কগ্রস্ত। তারা সমানে খাবার জিনিস কিনে মুজদ করছেন। আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমাদের খাদ্যদ্রব্যের কোনো সমস্যা নাই। এখনও ১৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য সরকারি গুদামেই মজুদ আছে। সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন গম আমাদের মজুদ আছে। বেসরকারি রাইস মিলের কাছেও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুত আছে। সারা বাংলাদেশের বড় কৃষকদের কাছেও ধান, চাল মজুদ আছে। তাছাড়া আমাদের ক্ষেতে ফসল আছে, কৃষক ফসল বুনছে। তরকারি, শাক-সবজি আমাদের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের লবণ উৎপাদন প্রচুর হচ্ছে। একজনকে দেখলাম তিনি বলেছেন তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনে রেখেছেন। এটা কতদিন খাবেন তা আমি জানি না। সেটা দিয়ে তিনি করবেন। আর পেঁয়াজের একবার দাম বাড়ার ফলে অনেকে প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মজুদ করেছিলেন। ফলাফল এই হয়েছিল যে পেঁয়াজগুলো পঁচে যাওয়াতে তা ফেলে দিতে হয়েছিল।
আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন। এই কারণে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে বাজার জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে যার টাকা আছে সে হয়তো কিনতে পারছেন কিন্তু যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য তো এত কেনা সম্ভব না, তাদের কষ্ট হয়ে যায়। অন্যকে এভাবে কষ্ট দেয়ার অধিকার কারও নাই। সেক্ষেত্রে আমি বলবো আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এটা নজরদারিতে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষের প্রতিও আহ্বান জানাবো আপনারা নজরদারিতে রাখেন। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, আর জিনিসপত্রের মজুদ কারো করা উচিত না। কাজেই সবাই স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, সবই আছে।’-যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সকলের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে রিজার্ভ আছে তাতে আগামী এক বছরের খাবার ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকেও দুঃচিন্তা করার কোন কারণ নাই।
জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, সকলকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে কাপড় দিয়ে নাক ঢেকে রাখতে হবে বা কনুই দিয়ে হাতটা ডেকে রাখা অথবা যেখানে সেখানে না যাওয়া। আর বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না। কারণ আপনিতো নিজে সংক্রামিত হতে পারেন, নিজের পরিবারকে করবেন আবার আরও ১০ জনের মাঝে ছড়াবেন। কাজেই অন্যর জীবনকে এভাবে বিপদগ্রস্ত করা মোটেই সমীচীন নয়। সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এটাই চাই।
যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা গ্রামে যাচ্ছেন তারা একটা কাজ করতে পারেন, নিজের মাটি আছে, তাতে ফসল ফলান। তরকারি লাগান। সকলেই ভিটামিন সি বেশি করে খাবেন। এখন ভিটামিন সির অনেক কিছুই বাজারে আছে। টমেটো, কমলালেবু, মৌসুমী ফল, টক জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়া। এটা প্রচুর খেলে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক শক্তি শরীরের মাঝে জমা হবে।
বাহিরে অযথা না ঘোরার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাহিরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকেন। আর নিজেকে, পরিবার ও সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখেন। সেটাই আমি আশা করি। সবাই ঘরে বসেই দোয়া করেন, যাতে এই রোগ থেকে মানবজাতি মুক্তি পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন সারাবিশ্বে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বের ১৮১ দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আর সেই অবস্থার মধ্যে এই নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে। যখন চীনে করোনাভাইরাস দেখা দিলো তখন থেকেই আমরা কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখান থেকে ৩১৫ জন শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে এনে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে ছেড়েছি। যারাই বিদেশ থেকে আসছেন তাদের আমরা পরীক্ষা করছি। আর যার ভেতরে এতটুকু সন্দেহ আছে তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।
করোনারোধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে এই ভাইরাস থেকে আমরা জনগণকে মুক্ত রাখতে পারি সেখানে প্রতিদিনই এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়া এবং তা প্রচারেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর এই ব্যাপরে যথেষ্ট সতর্ক এবং তারা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। সেই দিক থেকে বলবো বাংলাদেশ এখনও মোটামুটি ভালো আছে। তবে বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা অনেক সময় এর বাহক হয়ে থাকেন। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের সকলের নিরাপত্তার জন্য ১৪টা দিন যাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। তার মাধ্যমে যাতে তার পরিবারের সদস্য ও সাধারণ জনগণ কেউ যেন সংক্রামিত না হয়, সেই ব্যাপারে তাদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কয়েকটি হাসপাতালও সুর্নিদিষ্ট করে দিয়েছি যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাক্তার, নার্সসহ ওখানে যারা কর্মকর্তা আছেন তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করছি। এছাড়াও আমাদের দেশে প্রস্তুত করা মাস্কসহ নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের পোশাক সংগ্রহ আমরা অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছি। তা প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করছি এবং আমরা দিচ্ছি। আমাদের ইমিগ্রেশনে যেসকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সেখানে যারা কর্মরত আছেন সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বোপরি নিরাপত্তার জন্য যখন যা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই এদিক থেকে আমরা আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি’ জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সতর্কতা বার্তা দেয়া হচ্ছে। আমি শুধু আশা করবো আমাদের দেশবাসী যাতে এটা মেনে চলে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন আমাদের লোক সমাগম হয় এমন কর্মসূচি আমরা বাতিল করে দিয়েছি বা স্থগিত করে দিয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন করার জন্য অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে লোক সমাগম হবে বলে আমরা সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা যে এটাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছি সেটা আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন। আমরাতো জন্মশতবার্ষিকী একবারেই পেলাম। আরতো পাবো না। কিন্তু তারপরও জনসাধারণের নিরাপত্তা ও কল্যাণে আমরা এই কর্মসূচি স্থগিত করে রেডিও, টেলিভিশন আর অনলাইনে প্রচার করেছি। এছাড়া আগামীতেও যেসব অনুষ্ঠান আছে যেখানে লোক সমাগম হয় সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেবো।
সরকার প্রধান বলেন, বিশেষ করে ২৬ মার্চ সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের কথা, আমি আলোচনা করবো। আমার মনে হয় সেটাও আমাদের স্থগিত রাখতে হবে। যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি নিজের মতো করে আমরা শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু এই লোক সমাগমটা আমাদের বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে আমাদের যতগুলো অনুষ্ঠান আছে তা খুব সীমিত আকারে, আর যেখানে জনসমাগম হবে তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে করা এই সংক্রামক সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে।
এ সময় নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, আমরা ভোট দিয়ে আসছি। আমাদের প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের নৌকা মার্কায়। আমরা চাই জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করুক। জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। ইনশাল্লাহ নৌকা জয়যুক্ত হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *