ফলোআপ
বিশেষ প্রতিবেদক : আয়ুর্বেদিক ওষুধ নামে উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্যামিকেলযুক্ত নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের অবৈধ ওষুধ। এসব ক্ষতিকর কেমিকেলযুক্ত কথিত আয়ুর্বেদিক ওষুধ সেবনে ভয়ংকর পাশ্র্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগন। বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করে রোগ সারাতে এসব কথিত আয়ুর্বেদিক ওষুধ কিনে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে জটিল ও কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। গত ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ইং তারিখে কথিত নবীন ল্যাবরেটরির (ইউনানী) মেরিগোল্ড নামক ভিটামিন সিরাপ খেয়ে বগুড়া গাবতলী থানার এলাকার বহল বাড়িয়া ইউনিয়নের খাড়ারা গ্রামের পলান শেখের পুত্র নূর-মোহাম্মদ (৫০) এবং এককি গ্রামের নবাব আলীর মেয়ে শামীমা (৯) নামের দুইজন মারা যায়। নবীন ল্যাবরেটরির (ইউনানী) এর মেরিগোল্ড সিরাপ খেয়ে ২ জনের মৃত্যুর খবরে নড়েচড়ে বসে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। মেরিগোল্ড নামক ভিটামিন সিরাপ সেবনের ২ জনের মৃত্যুর খবরে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এছাড়া গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মোহামাদনপুর গ্রামের মহিন উদ্দিন (৪০) বসুরহাট পৌরসভার ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের নুরনবী মানিক (৫০), রবি লাল রায় (৫৭), চর কাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজার এলাকার আব্দুল খালেক (৭২), সিরাজপুর ইউনিয়নের সবুজ (৬০) নামক ৫ জন হোমিও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত রেক্টিফাইড স্পীরিট সেবনে মারা যায়। এ ঘটনায় দুটি হোমিও দোকান সিলগালা করে ওষুধ প্রশাসন। কিন্তু খোলা বাজারে রেক্টি ফাইড স্পীরিট পাচার কায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি ওষুধ প্রশাসন। সম্প্রতি আজকের দেশ অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিগো ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), একরাম ল্যাবরেটরিজ (আয়ু), জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং ইউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) এই ৫টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভেজাল, নিম্নমানের ও অবৈধ ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতের অভিযোগে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে অদ্যাবধি স্বাস্থ্য সচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাসহ তোলপাড়ের সৃষ্টি হলেও টনক নড়ছে না ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নথি সংশ্লিষ্ট ও মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। বরং প্রতিবেদন প্রকাশের পর উল্লিখিত কোম্পানীর মালিকরা ওষুধ প্রশাসনের নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে বেশষ খোশ মেজাজেই আছেন। খোশ মেজাজে থাকা চিহিৃত ওই ৫ কোম্পানীর মালিকদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিতর্কিত কোম্পানীর মালিকরা মহাখালি ওষুধ ভবনে গিয়ে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে টি-পার্টিতে শরিক হয়ে সকল অভিযোগ থেকে অব্যহতি পেতে দেন-দরবার করছেন। তবে টি-পার্টিতে দেন-দরবার করে বিতর্কিত ও চিহ্নিত এসব কোম্পানীর মালিকরা কি সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছেন সেটা জানা যাবে ওষুধ অধিদপ্তরের চলমান কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করলে। রাজধানীর ডেমরা আমুলিয়া মেন্দীপুর এলাকার বিগো ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর কারখানা পূর্বে মুগদা মদিনাবাগ খালপাড় এলাকায় ছিলো বর্তমানে কারখানা স্থানান্তিরিত হয়েছে। উক্ত কোম্পানীটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতের উৎপাদন লাইসেন্সের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকারক কেমিকেল ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ জনস্বাস্থ্যের বিরুপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব ফেলে এমন সব ওষুধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী জানাযায় উক্ত কোম্পানী হরমো-বি, ভিগোর, জিনসেং প্লাস, বিগো পাওয়ার নামক যৌন উত্তেজক ওষুধ সামগ্রীতে ভায়াগ্রার উপাদান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সিলডেনাফিল সাইট্রেট নামক কেমিকেল ব্যবহার করছে। এই সিলডেনাফিল সাইট্রেট ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবরেটরিতে হরমো-বি, সিরাপ ও বিগো পাওয়ার ক্যাপসুলের নমুনা পরীক্ষাকালে। যানা গেছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ইং সালে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোঃ নাজমুল হাসান বাজার থেকে বিগো ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর প্রস্তুতকৃত হরমো-বি, সিরাপ এবং বিগো পাওয়ার নামক ক্যাপসুলের নমুনা পরিক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত মহা খালির ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবরেটারিতে প্রেরণ করলে পরিক্ষাকালে উক্ত ওষুধ সমূহে সিলড্রেনাফিল সাইট্রেট শনাক্ত হয়। এরপর ওষুধ নিয়ন্ত্রন অধ্যাদেশ অনুসারে বিগো ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর প্রস্তুতকৃত হরমো-বি ও বিগো পাওয়ার নামক ওষুধ দুটি বাজার থেকে প্রত্যাহার পূর্বক ওষুধ অধিদপ্তরকে অবগত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে ওষুধ প্রশাসন। উক্ত নমুনা পরিক্ষার রিপোর্ট দুটির স্মারক নং- ডি.টি.এল/ আয়ু-০২-১৭-০৪৫/১৫৪৪ তারিখ- ০৭-০৫-২০১৭ইং অপরটির স্মারক নং- ডি.টি.এল/আয়ু-০২-১৭-০৪/১৫৫৩ তারিখ-০৭-০৫-২০১৭ইং। উক্ত কোম্পানী হরমো-বি এবং বিগো পাওয়ার নামক ওষুধ গুলি বাজার থেকে প্রত্যাহার না করে ব্যাচ নাম্বার পরিবর্তন করে একই কেমিকেল মিশ্রিত ওষুধ বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার রুচিজেন-এস ও ভীমরস নামক সিরাপ দুটিতে একই ডিএআর নম্বর ব্যবহার (আয়ু-৯৩-এ-০৩২) করার অভিযোগ ও দীর্ঘদিনের। আমলকি প্লাস রসায়ন নামক সিরাপে ডেক্সামেথাসন ও সিপ্রোহেপ্টাডিন নামক ক্যামিকেল ব্যবহার করার অভিযোগ আছে বিগো ফার্মার বিরুদ্ধে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই মূহুর্তে বিগো ফার্মার উৎপাদিত হরমো-বি, বিগো-পাওয়ার জিনসেং প্লাস, আমলকি প্লাস রসায়ন, ভীমরস, রুচিজেন এস, বলারিষ্ট ও ফলারিষ্ট নামক ওষুধ সমূহের নমুনা পরিক্ষা করলে ক্ষতিকর ও পাশর্^ প্রতিক্রিয়াযুক্ত ক্যামিকেল ব্যবহারের বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য সচেতন একটি মহল। একরাম ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর বিরুদ্ধে এমিটন প্লাস (দশমুলারিষ্ট), মিমোটন (ব্রক্ষী রসায়ন), একরোপ্লেক্স (ভীমরস), একরোভিট (বলরিষ্ট) সিরাপে ডেক্সামেথাসন ও সিপ্রোহেপ্টাডিন নামক ক্যামিকেল ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এছাড়াও একরাম ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর শুক্রসুধা ২০০ গ্রাম হালওয়া, শ্রীকামেশ^র ৫০০ গ্রাম মোদক, সঞ্জিবনী ২০০ গ্রাম মোদক, এ-টাইজার ট্যাবলেট ও এ-এজমোনিল ট্যাবলেট উৎপাদন কালে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এমন সব কেমিকেল ব্যবহার করে যার পাশর্^প্রতি ক্রিয়া অত্যান্ত ভয়াবহ। উক্ত কোম্পানি শুক্রসুধা নামক ২০০ গ্রাম হালওয়া এবং শ্রীকামেশ^র নামক ৫০০ গ্রাম মদোকের ডিএআর নম্বর একই (আয়ু-১০২-এ-০১৫) ব্যবহার করছে বেলও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জুরাইনের দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর কর্তৃপক্ষ দির্ঘদিন যাবত নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এমন অভিযোগে অত্র পত্রিকাসহ একাধিক পত্রিকায় রিপোর্ট প্রাকাশিত হলেও টনক নড়েনি ওষুধ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের। উক্ত কোম্পানী দি-টোন ও বলারিষ্ট নামে একই ডিএআর (আয়ু-৪৯-এ-০৭) নাম্বার ব্যবহার করে দুই প্রকার সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এমন অভিযোগে উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও ব্যবস্থা নেয়নি ওষুধ প্রশাসন। জুরাইনের জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এবং খুলনার ইউনিট ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) কোম্পানী দুটির মালিক তাসলিমা বেগম। তাসলিমা বেগম অত্যন্ত সুচতুর ও ধুরন্ধর প্রকৃতির মহিলা। তার বিরুদ্ধে জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) ইউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) এবং জেনেসিস ম্যানুফেক্সারিং কোম্পানি নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাতের অভিযোগে একাধিক বার রিপোর্ট প্রকাশের পর অভিযোগ থেকে অব্যহাতি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার রুমে গিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে কেদে কেটে কর্মকর্তাদের ষোলকলা দেখিয়ে তার স্বামী শহিদুল ইসলাম কঁচির মৃত্যুকে পুজিঁকরে কর্মকর্তাদের সহানুভূতি হাতিয়ে নিয়ে রাতের আধারে নকল ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। উক্ত কোম্পানীর বলারিষ্ট ও জিও-ভিট নামক ৪৫০ মিলি সিরাপে (আয়ু-১২৮-এ-০১০) একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। আবার দশ মুলারিষ্ট ও বিগো-১০ নামক ৪৫০ মিলি সিরাপে ফ্যামেলি ছবি ব্যবহার করেছে এবং এই দুটি সিরাপের ডিএআর নম্বর ও একই (আয়ু-২২৮-এ-০৩২) একটা রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারে একাধিক ওষুধ বাজারজাত হয় কিভাবে? আবার ইউনিট ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) এর ব্যানারে ইউলিকা সিরাপে মানুষের ছবি এবং মুমসিক নামক যৌন উত্তেজক ক্যাপসুলের প্যাকেটে ঘোড়ার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে জেনেসিস ম্যানুফ্যাক্সারিং নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে পাওয়ার প্লাস নামক ভিটামিন সিরাপে ও মানুষের ছবি ব্যবহার করা কতোটা আইন সিদ্ধ তা ওষুধ প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। বিগো ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) একরাম ল্যাবরেটারিজ (আয়ু) দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এই চারটি কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় ফাইলের কাজ ওষুধ প্রসাশন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ এর দায়িত্বে। সহকারী পরিচালক তানভীন আহমেদ কি এসকল বিষয়ে অবগত নন? ওষুধ পরিদর্শক নাহিন আল-আলম ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী শ্যামপুরসহ মোট ১১ (এগারো) টি থানা এলাকার পরিদর্শক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি ফেসবুক মনিটরিংয়ের দায়িত্ব আছেন। এসব কোম্পানীর বিরুদ্ধে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু কি তার দায়িত্বে পড়ে না। একরাম ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর মালিক একরাম তার নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে তার মালিকানাধীন কোম্পানীর ঔষধের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন। এটা দেখার দায়িত্ব ও পরিদর্শক নাহিন আল-আলমের। সাভার এলাকার দায়িত্বে আছেন ওষুধ প্রসাশন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসু উদ্দিন তিনি একরাম ল্যাবরেটরিজের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।