নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সবার ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৪ এপ্রিল সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ দিনের সাধারণ এই ছুটির প্রথম দিন রাজধানীতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া মানুষদের ঘরে ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। নগরীর প্রতিটি মোড়ে ও সড়কে টহল দিচ্ছেন তারা। যারাই বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। দুয়েকটি ক্ষেত্রে লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মুগদা, মানিকনগর, ফকিরাপুল, মহাখালী, বনানী, গুলশান, ফার্মগেট, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অযথা ঘোরাফেরা করতে বের হওয়া ব্যক্তিদের লাঠিপেটা করতেও দ্বিধা করছেন না পুলিশ সদস্যরা। এমনকী কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা অযথা ঘর থেকে বের হচ্ছেন, প্রয়োজনে বল প্রয়োগে তাদের ঘরে ফেরানো হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গাড়িতে টহল দেওয়ার পাশাপাশি হেঁটেও দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা। গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোথাও বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে স্বল্প সংখ্যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চলতে দেখা গেছে। রাস্তায় কাউকে পাওয়া গেলেই কেন বের হয়েছেন জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে তিরস্কার করা হচ্ছে, বাসায় ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে অবস্থান করার জন্য মাইকে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। যেসব দোকানপাট খোলা আছে, সেগুলোও তদারকি করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী কাজ করছে।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুরে দুটি টহল গাড়িসহ আসেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ। সে সময় এক পুলিশ সদস্য মাইক হাতে করোনা প্রতিরোধে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির চালক ও পথচারীদের কাছে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় তখনই তাদের ঘরে ফেরানো হয়। কয়েকটি মোটরসাইকেলও থামানো হয় সে সময়। এর চালকেরা কোনও কারণ ছাড়াই বাইরে বের হন, তাদের লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
মোহাম্মদপুরের কাটাসুর থেকে সলিমুল্লাহ সড়কে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আশরাফ। ফেরার পথে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের টহল গাড়ির সামনে পড়েন তিনি। বাসা থেকে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন তিনি।
আশরাফ বলেন, কিছুক্ষণ আগে সলিমুল্লাহ রোডে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে ফেরার সময় পুলিশ আটকেছিল। আর বের হওয়া যাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছু মানুষ কোনও কারণ ছাড়াই রাস্তায় বের হচ্ছে। ফাঁকা শহর দেখতে বের হচ্ছে তাদের লাঠিপেটা করা হচ্ছে। যাতে অন্যরাও সতর্ক হয়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ বাইরে না বের হয়।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। রাস্তায় যাতে লোকজন না বের হতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের মতো ১০ দিন বন্ধ থাকবে রাইড শেয়ারিংও। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে মোটরসাইকেলে চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।
সংখ্যায় এমন মোটরসাইকেল চালকের কম হলেও তাদের পথরোধ করে ঘরে ফেরানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, প্রাথমিকভাবে কোনও জরিমানা ছাড়াই তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
দুপুরে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে রাইড শেয়ারে একজন মোটরসাইকেল চালককে যাত্রী নামাতে দেখা যায়। শহীদুল ইসলাম নামের ওই মোটরসাইকেল চালক বলেন, কিছু ইনকামের আশায় নেমেছি। পুলিশ যেখানে আছে, যাচ্ছি না; একটু দূরে দূরে থেকে চালাচ্ছি।’
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের চেকপোস্ট রয়েছে। টহল চলছে। কেউ রাইড শেয়ারিং করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে খাবার হোটেলের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা জানান, হোটেল খোলা রাখা যাবে। তবে ভেতরে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। ক্রেতারা কেবল পার্সেল নিতে পারবেন।
ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে খাবারের দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, ওয়্যারলেসে কমিশনার মহোদয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। খাবারের হোটেল খোলা রাখা যাবে। তবে ভেতরে বসিয়ে কাউকে খাবার দেওয়া যাবে না। পার্সেল দিতে হবে।
তবে হোটেল মালিকরা জানান, খোলা রাখার সুযোগ থাকলেও কর্মচারী সংকটের কারণে সব হোটেল খোলা রাখা যাচ্ছে না। ছুটির কারণে অনেক কর্মচারী দেশের বাড়িতে গেছেন।