অলিগলি লোকারণ্য

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী স্বাস্থ্য

সড়কে আনাগোনা কম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে চলমান ‘লকডাউনে’ রাজধানীর মূল সড়কে মানুষ এবং পরিবহন দেখা না গেলেও অলিগলিতে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক। খোলা রয়েছে গলির চায়ের দোকান। চলে বিক্রি আর আড্ডা। লকডাউন চলাকালে শুধু খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধের দোকান খোলা থাকার অনুমতি থাকলেও কোথাও কোথাও মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান, গিফট শপ খোলা থাকতে দেখা গেছে। চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। সব মিলিয়ে রাজধানীর অনেক এলাকায় এই লকডাউনের প্রভাব কিছু কম। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মিরপুর রোডের আড়ং, আসাদগেট এভিনিউ, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক ও মানিক মিয়া এভিনিউ, মুগদা, মানিকনগর, গোপীবাগ ঘুরে দেখা যায়, এসব সড়কে যান চলাচল নামমাত্র। যেসব যানবাহন চলাচল করছে তার বেশিরভাগই হাসপাতালগামী, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা সামগ্রী পরিবহণ, নার্স ও হাসপাতালগামী কর্মীদের আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত।
সড়কে রিকশার আধিক্য দেখা গেছে। তবে তাতে যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম। এছাড়া ব্যক্তি প্রয়োজনে বাইরে রয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও খুবই কম। তবে মিরপুর রোডের পশ্চিমে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকার অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। এসব এলাকায় সড়কে মানুষের চলাফেরা অনেকটা স্বাভাবিক দিনের মতোই ছিল।
স্থানীয়দের মতে, সকালে এসব এলাকায় মানুষের আনাগোনা অনেক থাকত। তবে বর্তমানে সেটি কিছুটা কম। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই লোকারণ্যে পরিণত হয় এসব এলাকা। আদাবর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আদাবর বাজার, মেহেদীবাগ, ঢাকা হাউজিং, আদাবর ১০, ১৬, ১৭ নম্বর সড়কে মানুষজন অবাধ চলাচল করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, র‌্যাব, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখলে মুহুর্তের মধ্যে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী স্থান ত্যাগ করলে আবারও পুরো সড়কে পরিণত হয় লোকারণ্যে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার অবস্থা এমন যে মানুষ হয়ত জানেই না, দেশে বা পুরো পৃথিবীতে কিছু একটা চলছে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন। তারা সারাদিন রাস্তায় আড্ডা দিচ্ছে, একে অন্যকে বলছে, এই দেশে এতজন মারা গেছে, ওইদেশে ততজন মারা গেছে। কিন্তু তাদেরও যে ঝুঁকি আছে, তারা তা মানতে নারাজ।
সুনিবিড় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সজিব হোসেন বলেন, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হতে মানা। কিন্তু আমি আমার বাসা থেকে সারাদিন যাদেরকে রাস্তায় দেখি, তাদের কারো কোন প্রয়োজন দেখি না। সবাই ঘুরেফেরে আড্ডা দেয়, চা খায়, সিগারেট খায়। সব স্বাভাবিক। মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের ৭ নম্বর খাল পাড়, নবোদয় হাউজিং শ্যামলি হাউজিং এলাকায় চায়ের দোকান খোলা থাকছে নিয়মিত। এসব দোকানের সামনে খদ্দেরদের আড্ডা দেয়ার পুরনো চিত্র এখনো রয়েছে। সড়কে মানুষের আনাগোনা অনেকটা স্বাভাবিক।
নবোদয় হাউজিংয়ের বি ব্লক এলাকায় মানুষের আনাগোনা তুলনামূলক বেশি। পাশে বাজার থাকায় কে বাজারের ক্রেতা আর কে এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তা শনাক্ত করা কঠিন। আবার বাজারের পাশাপাশি সড়কের মুখে মুখে কিশোর, যুবকদের আড্ডা দেয়ার চিত্র আগের মতোই দেখা যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এখানকার বাসিন্দাদের চলে চোর-পুলিশ খেলা। সেনাবাহিনী বা পুলিশের গাড়ির শব্দ শুনতেই বেশিরভাগে মানুষ আড়ালে চলে যায়, গাড়ি চলে যেতেই আবারও সড়ক জুড়ে শুরু হয় আড্ডা। সন্ধ্যার পর নিয়মনীতির মোটেও তোয়াক্কা করেন না এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা। দিনের বেলা অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও দিনের আলো নিভে যেতেই মাস্ক ছাড়া, কেউ খালি গায়ে সড়কে নেমে আসেন। চলে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা।
আড্ডার চিত্র আরও জমজমাট মোহাম্মদপুরের বর্ধিত এলাকাগুলোতে। নবীনগর, ঢাকা উদ্যান, সাত মসজিদ হাউজিং, চাঁদ উদ্যানের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে লকডাউন নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে এসব এলাকার সচেতন নাগরিকরা রয়েছেন ভয়ে।
ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, কিসের কি লকডাউন। এখানকার মানুষ এসব মানে নাকি? লকডাউন মানে কিছু দোকানপাট বন্ধ হয়েছে। অলিগলিতে চায়ের দোকান সহ সব ধরণের দোকানপাট খোলা, মানুষও সব রাস্তায়।
মনিরের কথার সত্যতা পাওয়া গেল। হাজী জয়নাল আবেদিন বাজারের পেছনে সবজি বাজার লাগোয়া চায়ের দোকানটি খোলা। চলছে বেচাকেনার ধুম। নেই সামাজিক দূরত্বে বালাই। একই চিত্র আশপাশের গলিতেও।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *