ফায়ার সার্ভিসে মহাপরিচালকের ‘ক্যাশিয়ার’ লে. কর্নেল (অব.) জুলফিকারের দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের ‘ক্যাশিয়ার’ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জুলফিকার আলী।


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  : বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের ‘ক্যাশিয়ার’ নামে পরিচিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে দফায় দফায় দুর্নীতি, আত্মীয়কেন্দ্রীক লুটপাট এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, ঘনিষ্ঠদের নামে টেন্ডার বাগিয়ে নেয়া এবং ফায়ার সার্ভিসের ‘ফায়ার পল্লী’ প্রকল্পকে ব্যক্তিগত ব্যবসায় রূপান্তরের মত বিস্ময়কর তৎপরতার চিত্র উঠে এসেছে অনুসন্ধানে


বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার : লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জুলফিকার ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত থাকাকালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিপুল প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিস্তর সম্পদের মালিক হন। সে সময় তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করেন।


বিজ্ঞাপন

ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী জুলাই অভ্যুত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে মোটা অংকের অর্থ ফান্ডিং করেছিলেন তিনি। এমনকি এই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার উপর চালানো রক্তাক্ত হামলার অন্যতম সহযোগী হিসেবেও তার নাম উঠে এসেছে।

টেন্ডার বানিজ্য: স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার কাজ ;  জুলফিকারের স্ত্রীর নামে নিবন্ধিত ‘SGC Software Global Consultancy’ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি, তার চাকরিজীবনের সময়কালেই, ফায়ার সার্ভিসের শত শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। বর্তমান ডিজি দায়িত্ব গ্রহণের পরও তিনি নতুন লাইসেন্স নিয়ে আবারও সরকারি প্রকল্প দখলে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

টঙ্গীতে কেমিক্যাল জোনে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন কাজ সরাসরি ফায়ার সার্ভিস কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে তার কোম্পানিকে প্রদান করা হয়। সূত্র জানায়, এই কাজের মান, স্বচ্ছতা এবং দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে ব্যাপক প্রশ্ন।

ফায়ার পল্লী’ থেকে ব্যক্তিগত আবাসন ব্যবসা৷ :  ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প ‘ফায়ার পল্লী’ বর্তমানে তার ব্যক্তিগত ভূমি ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি প্রকল্পটি স্থগিত করে ‘ফায়ার সার্ভিস’ নাম, লোগো এবং ব্র্যান্ড ব্যবহার করে নিজের কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত প্রায় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

বর্তমান মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হওয়ায়, তার সহায়তায় ফায়ার পল্লীর প্রায় ১২০ শতক জমি, মিরপুর ডিওএইচএসে একাধিক ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে নিম্নমানের ট্রেনিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, গজারিয়ায় একশ একর জমি কেনার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে তার নাম জড়িয়ে আছে। ৩০ হাজার টাকার জমি ৫/৬ লাখ টাকা শতক ক্রয় দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

গোপন বৈঠক ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা : গত ১৮ এপ্রিল ‘ফায়ার পল্লী’ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের মহা-পরিচালক ও জুলফিকারের সাথে গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনার ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত শেখ মেহেদী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহেই শেখ মেহেদী ও জুলফিকার অন্তত দুই দিন ‘ফায়ার পল্লী’ নিয়ে গোপন পরিকল্পনায় মিলিত হন। শেখ মেহেদীর পরিচয় ব্যবহার করে বিগত সরকারের আমলে ফায়ার সার্ভিসে থাকাকালীন সময়ে জুলফিকার কোটি কোটি টাকার জমি, টেন্ডার এবং প্রকল্প নিজের হাতে বাগিয়ে নিয়েছেন।

একাধিকবার এমডি পদ লাভ ও ইতিহাসবহির্ভূত সিদ্ধান্ত : বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে অবসরের পরও তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া বিপুল অর্থের বিনিময়ে দুইবার ফায়ার সার্ভিস কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি পদে নিয়োগ লাভ করেন, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে নজিরবিহীন।

নিম্নমানের অবকাঠামো ও লুটপাট  :  পূর্বাচলে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রেনিং কমপ্লেক্স ভবন তিন বছরের মাথায় পরিণত হয়েছে জরাজীর্ণে। অভিযোগ উঠেছে, এ প্রকল্পেও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন জুলফিকার।

বিপুল সম্পদের পাহাড়  :  রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ব্যবসা থাকা ছাড়াও কক্সবাজারের কলাতলীতে রয়েছে ৩০ শতকের একটি বাণিজ্যিক প্লট। গজারিয়ার ১০০ একর জমি, ফায়ার পল্লীর জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয়-স্বজনের নামে কেনা সম্পদের হিসাবও বিস্ময়কর। এসব সম্পত্তি তিনি অবসরে যাওয়ার আগে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় গড়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি গোপনীয় প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সম্পদের বেশিরভাগই সরকারের নাম ও প্রকল্প ব্যবহার করে অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে অর্জিত।

জনদাবি, সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা  :  ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বপ্নের ‘ফায়ার পল্লী’ প্রকল্পকে ধ্বংস করে স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে তুলে দেওয়ার পেছনে জুলফিকার ও তার মিত্রদের সরাসরি হাত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করা হোক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *