সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফ।

বিশেষ প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জ গজারিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফের অপকর্ম চাউর হলে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধ এক সময় গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে সুশীল সমাজসহ স্থানীয়রা মানববন্ধনের আয়োজন করলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তড়িঘড়ি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফরিদপুর সালথা উপজেলা বদলির আদেশ দেন। দুর্নীতির শাস্তি কি বদলি? এমন আদেশে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অপকর্মের দায়ে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করে বদলীর আদেশই শাস্তি এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফের ঘুষ , দুর্নীতি , ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সরকারি এ কর্মকর্তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য নতুন করে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়ে গোটা উপজেলাকে সমালোচিত করেছেন। অচিরেই তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে গতকাল এ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বিপুল অর্থ খরচ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। গজারিয়া উপজেলা চত্বরে আওয়ামী সরকারের কিছু দোসর ও গজারিয়ায় আওয়ামীলীগের পূনর্বাসনকারী কতিপয় বিএনপি’র দালাল নেতা দিয়ে মানববন্ধন করিয়ে নিজের সাফাই গেয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন।
ভুক্তভোগীদের দাবির মুখে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের তথ্য প্রমাণসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাঁর ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
একটি অনুসন্ধান সূত্র বলছে, মামুন শরীফ গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করার পর গজারিয়ার বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ গ্যাস দিয়ে চলা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, ভূমিদস্যুসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত লোকজনের যোগসাজশ করে মোটা অংকের ঘুষের মাধ্যমে ওইসব অবৈধ কাজ করার সুযোগ করে দিতেন।
বিনিময়ে এসিল্যান্ড মামুন শরীফ অবৈধ বালু উত্তোলনকারী, অবৈধ গ্যাস দিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি চালানো দুর্বৃত্ত ও বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত লোকজনের কাছ থেকে ব্যাংক একাউন্ট এবং সরাসরি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন।
এ অবৈধ কাজের তথ্য প্রমাণের নথি গণমাধ্যমের হাতে আসলে এসিল্যান্ডের ঘুষ-দুর্নীতির নানা অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এসিল্যান্ড তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। নিজেকে অপকর্ম আড়াল করতে বিএনপি নামধারী কিছু হাইব্রিড নেতাদের টাকা দিয়ে একটি দায়সারা মানববন্ধন করিয়েছেন মামুন শরীফ।
এদিকে একাধিক সূত্র বলছে , মামুন শরীফ তার ঘুষ-দুর্নীতি ও নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ দৌড়ঝাঁপের অংশ হিসেবে গজারিয়া থানার বিএনপির তথাকথিত একাধিক নেতার সাথে রোববার রাতে মিটিং করে তাকে রক্ষার জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়ে এই মানববন্ধন করার কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে, বিএনপি’র যেসব নেতার মাধ্যমে এসিল্যান্ড তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের পক্ষে সাফাই গাইতে মানববন্ধন করান, সেই বিতর্কিত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, অবৈধ কর্মকাণ্ড, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের পূর্ণবাসন এবং মামলা বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ।
এ অবৈধ বালু মহলগুলোর প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট থেকে গত ৭ মাসে নিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ।এ টাকা সরাসরি আবার কখনও ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের ব্যাংক রশিদ গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে।
অনুসন্ধান বলছে , মামুন শরীফ গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সাইদুর রহমান গংদের মালিকানাধীন নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে ভবন মালিকদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই ভবনের কাজ বন্ধ করে দেন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। এরপর সার্ভেয়ার কামালের মাধ্যমে অফিসে ডেকে নিয়ে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করছেন।
মামুন শরীফের পক্ষে মানববন্ধন করা গজারিয়া থানা বিএনপি’র প্রথম সারির “বালু দরবেশ” সহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে শুশীল সমাজসহ গজারিয়া স্থানীয় জনগণ। তাঁরা আরও জানান , জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির ওই সকল নেতারা গজারিয়া এলাকায় প্রবেশ করে শুরু করেন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখল, অবৈধ তেল , চোরাচালানি, মাদক ব্যবসা, অবৈধ বালু উত্তোলন, মামলা বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর গজারিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ দোসরদের মামলা থেকে রক্ষা করে এলাকায় যাহাতে তাদের পূর্ণবাসন করা যায় এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কুক্ষিগত করা যায় এ লক্ষ্যে গজারিয়া উপজেলার সাম্প্রতিক সময় বালু দরবেশ উপাধি পাওয়া জনৈক বিএনপি নেতা এবং হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া আরেক বিএনপি নেতা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামী দোসরদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরে এবং অনেক আওয়ামীলীগ নেতাকে ওই অর্থের বিনিময়ে বিএনপির এই দুই নেতা আওয়ামী দোসরদের রক্ষা করার জন্য এই অর্থ গ্রহণ করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এসব বিষয় জানতে চাওয়া হলে আমাদের মাতৃভূমি কে বলেন, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন গজারিয়া যোগদান করে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছি। এজন্য একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন আমি এটি অবগত না।