নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শন এর প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে গণ্য করা যায়। সে হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট “ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের” প্রতিফলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত বছরের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করে, ওই বাজেটের ধারাবিহকতা রক্ষা করা হয়েছে, বর্তমান বাজেটে। বিগত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কিছু কাটছাট করা হয়েছে ও কিছু বাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

মূল কাঠামো বা নীতির বা রাজনৈতিক দর্শনের তেমন কোন নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মূল্যবোধের জায়গা থেকে প্রাক্তন সরকারের ভাবধারার বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না।

রুটিন কাজ, বাজেট দিতে হবে তাই দেয়া, গতানুগতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা। গত বাজেট কাঠামো থেকে এবারের বাজেটে তেমন কোন ব্যত্যয় বা সংস্কার লক্ষ্যনীয় নয়।
তবে বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে। যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশী ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতি আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরণের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কোন স্বস্তির ব্যবস্থা নেয়। প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মুল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে মনে হয় না।
ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌছাবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে অর্ধভুক্ত ও অভূক্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করছি।
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোন সু-খবর বা স্বস্তি আনছে না, বলা যায়।
এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না, স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই হার ৯.১৭ পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। সামনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমবে এর কোন লক্ষণ আমরা দেখছি না।
এই বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎখাতের কোন উন্নয়ন করতে পারিনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যার বেশিরভাগই ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। ফ্যাসিস্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গ্যাসের বিষয়ে বাজেটে বায়োবীয় কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। কালো টাকা সাদার করতে দেয়া নীতি বহির্ভূত বা গর্হিত কাজ। বর্তমান সরকারও দূর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোন পরিবল্পরা পরিস্কার ভাবে বলা হয়নি বাজেটে। রাজস্ব দিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে কিভাবে? সামাজিক নিরাপত্তাখাতে যেসব কথা বলা হয়েছে তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এই বাজেট দিয়ে সরকার কিভাবে কাজ করবে তা পরিস্কার নয়। উদ্যোক্ততা তৈরীর বিষয়টি আগেও ছিল, এবার বাজেট দেখে মনে হচ্ছে ছাত্ররা সবাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে উদ্যোক্ততা হবেন।
ছাত্ররা ব্যবসার পাশাশি রাজনীতিতে যোগ দিবেন তাই মনে হচ্ছে। উদ্যোক্ততা তৈরির পাশাপাশি আমরা শিক্ষিত জাতি গড়ে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় যাবো এই পরিকল্পনা থাকা উচিত। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাজেট অনুকরণে এই বাজেট তৈরী হয়েছে। কোথাও বাড়ানো হয়েছে কোথাও কমানো হয়েছে। বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক নিরাপত্তা এড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমানো ঠিক হয়নি। আয় ইনকামের খবর নেই, খরচ বাড়ানো হয়েছে।
ট্যাক্স আদায় করে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের লালন করার নিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচান করা হয়নি। আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ধার কর্য করে দেশ চালাতে পেরেছেন কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশী বিদেশী কোন প্রতিষ্টানই ধার দেবে না বর্তমান সরকারকে। সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেটে কোন সুখবর বা স্বস্তি নেই।