দুদকে অভিযোগ দায়ের : লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক  : আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর,লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের মালিক আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যাংক থেকে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে কয়েকশত কোটি টাকা আত্মসাত, হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবি।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আওয়ামী ফ্যাসীবাদের দোসর- সাবেক সাংসদ-আনোয়ার হোসেন খান-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ঢাকা-ধানমন্ডিতে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, নাসিং ইনস্টিটিউট ও উত্তরায় বিশ^বিদ্যালয়ের একচ্ছত্র মালিক।


বিজ্ঞাপন

বিগত আওয়ামী ফ্যাসীবাদ সরকারের সময় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এমপি ছিলেন দুইবার। এমপির পরিচয় বহন করে- তার সকল প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিমিত কোন আয়কর ও ভ্যাট প্রদান করেন নাই। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছেন অথচ নিয়মিত কর ফাঁকি দিয়েছেন সরকারী দলের এমপি হিসাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর নথি তদন্ত করলেই বিস্তারিত রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। এর পূর্বেও সিআইসি ও এনবিআর তার প্রতিষ্ঠান সমূহের তদন্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী এমপি থাকায় কেউ কোন কর্নপাত করেনি- তদন্ত কার্য্যক্রম স্থগিত করে রাখেন।


বিজ্ঞাপন

আনোয়ার হোসেন খান এর সিংগাপুরে ফ্ল্যাট এবং ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। ৩ মাস অন্তর অন্তর মেডিকেল চেকআপ এর নামে সিংগাপুরে গমন করে টাকা পাচার করেছেন । তার আয় ব্যায়ের হিসাব ও অডিট রিপোর্ট তদন্ত করলেই সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে।
ঢাকার ধানমন্ডিস্থ ৯/এ রোডে তার অত্যাধনিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া নামে বেনামে ঢাকায় ৪/৫ টি ফ্ল্যাট আছে। আনোয়ার খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যবসার নামে অপকর্ম করে থাকেন। আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের নামে আশেপাশে সব জায়গা কিনেছেন শত কোটি টাকা দিয়ে। যা তার প্রতিষ্ঠান সমূহের আয়কর নথিতে নিয়মিত সন্নিবেশিত করা হয় নাই।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় যে, তিনি দেশ ও ব্যাংক লুটেরা এস আলম গ্রুপের সহযোগি ছিলেন। তখন এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আল আরাফা ব্যাংক থেকে জাল কাগজপত্রে ১ শত ৫০ কোটি টাকা লোন নিয়ে সেই টাকা আর ফেরত দেন নি। অন্যদিকে তার সাথে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর বাংলাদেশ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বন্ধুত্ব সম্পর্ক থাকায় এক্সিম ব্যাংক থেকে আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালের নামে সাড়ে ৪ শত কোটি টাকা লোন নেন। সেই টাকাও ফেরত দেন নি। এ সব টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন বলে দাবী করা হয়েছে।
তিনি আওয়ামী আমলে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ঢাকা ফকিরেরপুল কালভার্ট রোডে গণপূর্তের মালিকানাধীন প্রায় ৬ কাঠা জমি দখল করে ৬ তলা বিল্ডিং নির্মান করেছেন। ওই বিল্ডিং এ এখন মডার্ণ ডায়াগনেস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে।

১৩৩ কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা  : আরো জানাগেছে, আনোয়ার হোসেন খানকে ১৩৩ কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক। তিন কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে আনোয়ার খান মডার্ণের ঋণ পুনঃ তফসিলের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। উল্টো ঋণের অর্থ আদায় না করেই সুদ আয় দেখানো হয়েছে। এত সব ঋণ অনিয়মের পরও আনোয়ার হোসেন খান সংসদ নির্বাচন করেন এবং ছিলেন ব্যাংকের পর্ষদেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে ধানমন্ডিতে অবস্থিত আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ১২৪ কোটি টাকার ঋণের পুনঃ তফসিল অনুমোদন করে যমুনা ব্যাংক। কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পরিপালন করতে বলা হয়।

শর্ত অনুযায়ী, পুনঃ তফসিল করেতে হলে সুদসহ ঋণের তিন কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ঋণ পুনঃ তফসিল হলেও সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেনি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল বিষয়টি জানতে পারলে ওই ঋণকে ক্ষতিজনক মানে খেলাপি করতে নির্দেশনা দেয়, কিন্তু সেটিও করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ১২৪ কোটি টাকার ঋণের ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ছয়টি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এসব কিস্তিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধ করার কথা ছিল ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বর্তমানে আনোয়ার খান মডার্ণের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তথ্য বলছে, আনোয়ার খান মডার্ন থেকে ঋণ আদায় না করলেও ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঋণটি পুনঃ তফসিল বাবদ প্রায় ১১ কোটি টাকা আয় খাতে নেওয়া হয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত শর্তের লঙ্ঘন। এসব অনিয়মের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফের যুমনা ব্যাংককে দুটি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে।

যেখানে বিআরপিডির সার্কুলার পরিপালন করে ঋণটিকে মন্দ মানে খেলাপি হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদায় না করেই যে-ই অর্থ আয় খাতে নেওয়া হয়েছে, সেই আয়কে স্থগিত সুদ খাতে দেখাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আনোয়ার হোসেন খানকে জনসম্মুখে আর দেখা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনসেটও বন্ধ রয়েছে। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দাখিলকৃত অভিযোগটি আমলে নিয়ে অতিদ্রুত তদন্ত এবং তার স্থাবর,অস্থাবর সম্পদ সরকারের অনুকুলে জব্দের জন্য দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *