করোনা সংকট মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার

অর্থনীতি জাতীয় স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে করনোভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘অন্য ধরনের’ হাতিয়ার হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এই হাতিয়ার সরাসরি ভূমিকা না রাখলেও তথ্য দিয়ে, ম্যাপ দিয়ে, কোনও ব্যক্তি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন কিনা, তা জানানো ইত্যাদি মাধ্যমে সহযোগিতা করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এছাড়া, অ্যাপের ব্যবহার শুরু হয়েছে, তৈরি হয়েছে বাংলায় ওয়েব সাইট, আছে সার্বক্ষণিক কলসেন্টার। এসবই মানুষের সহযোগী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে দুর্যোগের এই সময়ে।
সরাসরি চিকিৎসার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে। গঠন করা হয়েছে ডেটা অ্যানালাইটিক্স টাস্কফোর্স। ছুটির সময়ে শুরু হয়েছে অনলাইনে পাঠদান, সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি ও এর প্রচার। নিরবছিন্ন নিরাপদ নেটওয়ার্ক ও সরবরাহ ইত্যাদি উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে দুটি মোবাইল অপারেটর করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য উপায় খুঁজতে সরকারের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে প্রতিযোগিতার (হ্যাকাথন) আয়োজন করেছে। আর এসবই করোনাযুদ্ধের বিরুদ্ধে এক অন্যরকম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ সময়ে আমরা টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছি। অনলাইনে সফলভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ন্যাশনাল কল সেন্টারে (৩৩৩) এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ কল এসেছে। এরমধ্যে ১১ লাখ কল এসেছে করোনা সংক্রান্ত। ৭০ হাজার কল এসেছে ত্রাণ সংক্রান্ত। আমরা নিরাপদ নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, বিনোদন ইত্যাদি নিয়ে বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান করেছি। তিনি জানান, টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে করোনা মোকাবিলা করা হচ্ছে ১২টি প্রতিষ্ঠানের একটি টেলিমেডিসিন নেটওয়ার্ক গঠন করে। এতে ৫১৭ জন ডাক্তার সেবা প্রদান করছেন। এ মাধ্যমে এরইমধ্যে ১৩ হাজার ৬২৬ জন সম্ভাব্য রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ৭৫৫ জন সম্ভাব্য আক্রান্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে শতাধিক প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে অন্তত ১৪৫টি কনটেন্ট ও শেয়ারড কনটেন্ট ৩২৬টি। এই কনটেন্ট ‘রিচ’ করেছে দেশের আট কোটি নাগরিক। অন্যদিকে নিরাপদ নেটওয়ার্ক ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে বিশেষ কিছু কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডেটা সেন্টার নিরবছিন্নভাবে চালু আছে এবং সাইবার ইন্সিডেন্স রেসপন্স টিম সক্রিয় রাখা হয়েছে। ৬৮টি ই-কমার্স ও লজিস্টিক কোম্পানি, ই-ক্যাব, ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন ও ব্যাংক সমন্বয়ে একটি লজিস্টিক কো-অর্ডিনেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সারা দেশে পিপিই, স্যানিটাইজার, মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা পণ্য সরবরাহকারীদের সক্ষমতা, উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষমতা নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় কর্মী ভেরিফিকেশন অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ৯ হাজার ৩৬৭ কর্মীর প্রোফাইল ভেরিফাই করে আপলোড করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, দেশের ১৫টি প্রতিষ্ঠান করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর তৈরি করতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সরকারি ছুটি ঘোষণার পর (২৬ মার্চ) রাজধানী ছেড়েছে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ (এক কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ধরে হিসাব করা হয়েছে)। এই মানুষগুলো দেশের কোথায় গেছে, কোন প্রান্তে আছে তাদের কন্টাক্ট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। এজন্য মেটা ডেটা করা হবে। নির্দিষ্ট লোকজন, যাদের আমরা ট্র্যাক করতে চাই, তাদের ট্র্যাক করার মতো প্রযুক্তি আমাদের রয়েছে।’ তিনি জানান, মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ এবং রবির সহযোগিতায় ‘আইডিয়া ফর গুডনেস’ নামে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এখান থেকেও কিছু সমাধান পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, আইসিটি বিভাগ করোনা বিষয়ক তথ্যের জন্য ন্যাশনাল ডাটা অ্যানালাইটিকস টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এটা থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি জানা যাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকাকে করোনাভাইরাসের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ ও মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে একনজরেই বোঝা যাবে দেশের কোথায় কী অবস্থা। এটা দেখে লোকেশনভিত্তিক আইসোলেশন বেড এবং সন্দেহভাজন করোনা রোগীর মধ্যে তুলনা, প্রয়োজনীয় আইসোলেশন বেড, আইসোলেশন সক্ষমতা, সন্দেহভাজন করোনা রোগী বের করা সম্ভব।


বিজ্ঞাপন