করোনা চিকিৎসা ও নিরাপত্তায় বিপর্যয়

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

আক্রান্ত ৩১৩ ডাক্তার নার্স, ডিএমপির ৭৩ পুলিশ,

১৯ সাংবাদিক ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করেই বাড়ছে। ৩১৩ ডাক্তার নার্স, ডিএমপির ৭৩ পুলিশ, ১৯ সাংবাদিক ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষী আক্রান্ত হওয়ায় যেনো চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রবাহে কিছুটা হলেও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩৮২ জন। মৃতের সংখ্যা ১১০ জন। সুস্থ হয়েছে মাত্র ৮৭ জন। এদিকে দেশে করোনাযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমেই বাড়ছে।
বর্তমানে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের ১১ শতাংশই স্বাস্থ্যকর্মী। সরকারি জেনারেল হাসপাতালের পাশাপাশি করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ এবং ওয়ার্ড। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাওয়ায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতে হচ্ছে অন্য চিকিৎসক ও নার্সদের। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটছে। ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে। ভয়ে আতঙ্কে অনেকেই করোনা চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে। করোনা ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় দেখা দেবে। চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে করোনা রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবে না। তাই যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও চিকিৎসক ও নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীকে সুস্থ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অসম্ভব।
এ ব্যাপারে করোনার সম্মুখযুদ্ধে থাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী, এমনকি মাঠপর্যায়ে যারা করোনা শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন, প্রত্যেকেই করেনাযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা। এদের সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে করোনাযুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে রাখা না গেলে করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যয় নামবে। তাই যেকোনো উপায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগমুক্ত রাখতে হবে। আক্রান্তের ভয়ে যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্যমতে, মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ২০৫ চিকিৎসক ও ১০২ জন নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিডিএফ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের কোনো তথ্য দিতে পারেনি। বিডিএফ আরও জানায়, আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই সরকারি চিকিৎসক। বাকি ২৫ শতাংশ বেসরকারি। সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে শুধু কিশোরগঞ্জ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। এছাড়া ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮, রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ২৪ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের আক্রান্তের কারণে ইতিমধ্যেই বেশকিছু হাসপাতাল লকডাউন ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ এবং বেসরকারি ইনসাফ বারাকাহ কিডনি ও জেনারেল হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ ও ইমপাল্স হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় বিডিএফ। অন্যদিকে বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির (বিবিজিএনএস) তথ্যমতে, মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশে ১০৮ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭০ ও বেসরকারি হাসপাতালের ৩৮ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন আরও ৩০০ নার্স। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢামেক হাসপাতালে ১৬ ও মিটফোর্ডে ১০ জন। এভাবে চিকিৎসক ও নার্সরা আক্রান্ত হতে থাকলে ভবিষ্যতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট দেখা দিতে পারে এবং অন্যরাও করোনাসহ সাধারণ রোগের চিকিৎসায় আসতে ভয় পাবেন বলে মত দেন বিডিএফের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. নিরুপম দাস। তিনি বলেন, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট রেজিস্টার্ড চিকিৎসক রয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার। এর মধ্যে বর্তমানে সেবা দিচ্ছেন ৭০ হাজার। এই ৭০ হাজারের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২০-২৫ হাজার সরকারি চাকরি করেন। সুতরাং সুরক্ষা না দিলে ভবিষ্যতে চিকিৎসক সংকট দেখা দিতে পারে। একইভাবে স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ও ঢামেক হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্স ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, দেশে রেজিস্টার্ড নার্স রয়েছেন ৬৫ হাজার। এর মধ্যে সরকারি চাকরি করছেন ৩৪ হাজার।
এসব চিকিৎসক ও নার্স কেন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, শুধু যে মাস্ক বা পিপিইর কারণেই আক্রান্ত হচ্ছেন, তা নয়। এখানে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। যেমন সোহরাওয়ার্দীর মতো জেনারেল হাসপাতালগুলোতে অন্য রোগ নিয়ে আসা রোগীরা তাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকার তথ্য গোপন করছেন। তারা মনে করছেন, করোনার কথা বললে তার অন্য রোগের চিকিৎসা হবে না। এটা ঠিক নয়। তথ্য গোপন করতে গিয়ে তিনি নিজে চিকিৎসক ও নার্সদের আক্রান্ত করছেন।
ঢামেক, মিটফোর্ড ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, রোগীরা তথ্য গোপন করার কারণে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের থেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে এক রোগী এসেছিলেন নেফ্রোলজির সমস্যা নিয়ে। কিন্তু তার জ্বর-কাশি ছিল সেটা বলেননি। দুই-তিন দিন পর দেখা গেল তার জ্বর -কাশি প্রকাশ পেয়েছে। পরীক্ষায় তার মধ্যে করোনা পাওয়া গেল। আবার দেখা গেল, গাইনি বিভাগে গর্ভবতী নারী এসেছেন। তার সন্তান প্রসব হলো। পরে দেখা গেল তিনি করোনায় আক্রান্ত। অথচ প্রথমে তিনি কিছুই বলেননি। আক্রান্তের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে এসব চিকিৎসক বলেন, অনেক সময় চিকিৎসকরাও অবহেলা করেন। তারা ঠিকমতো সুরক্ষা নেন না। অথচ তাদের পিপিই ও মাস্ক সবই ছিল।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, রোগীরা যদি তাদের মধ্যে সর্দি-কাশি-জ্বরের কথা বলেন, কতদিন আগে থেকে তারা এসব রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে কিন্তু আমরাও আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারি। তথ্য গোপনের কারণে জেনারেল হাসপাতালগুলোতে যত চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হচ্ছেন, কভিড-১৯ হাসপাতালে কিন্তু আক্রান্ত তেমন হচ্ছেন না। কারণ তারা জানেন সবাই করোনার রোগী ও সে ব্যবস্থা নিয়েই চিকিৎসা দেন। চিকিৎসক-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, এখন সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও চিকিৎসক, নার্সসহ সব ধরনের কর্মচারীদেরই ফুল পিপিই পরতে হবে। উন্নতমানের মাস্ক দিতে হবে। কারণ তিনভাবে করোনা ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ানো ড্রপলট থেকে। অন্যটা হলো অ্যারোসেল থেকে।
অর্থাৎ আইসিইউ বা ওয়ার্ডে আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বললে তার মুখের মাধ্যমে যে থুথু ছড়ায়, তা বাতাসে অ্যারোসেল তৈরি করে। সেটা দেখা যায় না। আরেকটা হলো সংস্পর্শ থেকে। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। এক রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ছড়াচ্ছে। সেটা না করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে আনতে হবে। রোগীদের রোগ নিয়ে সত্য কথা বলতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দরকার। যারা করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করছে, তাদেরও সুরক্ষা জরুরি।
ডা. নিরুপম দাস বলেন, সব হাসপাতালে সব চিকিৎসকের একসঙ্গে ডিউটিতে না এনে রোস্টার করে আনতে হবে। যাতে কেউ আক্রান্ত হলে ওই টিমকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে অন্য টিমকে ডিউটিতে আনা যায়। ভালো মানের এন-৯৫ মাস্ক দরকার। তবে পিপিই বা মাস্ক নিয়ে যে সংকট ছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। এ চিকিৎসক বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আলাদা ফ্লু কর্নার করতে হবে। সেখানে যে রোগীরা আসবে চিকিৎসক ও নার্সরা পিপিই পরে সুরক্ষা নিয়ে তাদের পরীক্ষা করবেন। সন্দেহ হলে ভিন্ন ওয়ার্ডে রেখে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাতে হবে। নমুনা আসা না পর্যন্ত তার সাধারণ চিকিৎসা চলবে। পরে আক্রান্ত হলে তাকে করোনা হাসপাতালে পাঠাতে হবে। ঢামেক হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, নার্সরা কমপ্লিট পিপিই পাচ্ছেন না। তাছাড়া হাসপাতালের প্রশাসন চাপ দিয়ে অনেক বেশি সময় ডিউটি করাচ্ছে। নার্সদের বাসা ও খাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিশেষ করে যেসব গর্ভবতী চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন, তাদের ছুটি দিতে হবে। এভাবে না করলে নার্সরা আরও বেশি আক্রান্ত হবেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, তারা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় পিপিই ও মাস্ক দিচ্ছে। গতকালও অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তর জানায়, এ পর্যন্ত পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৯টি। বর্তমানে মজুদ আছে আরও ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭১টি।
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, যখন যে হাসপাতাল যে চাহিদা দিচ্ছে, আমরা সে অনুপাতে পিপিই ও মাস্ক পাঠাচ্ছি। চিকিৎসক ও নার্সদের থাকা-খাওয়ার আলাদা ব্যবস্থা হচ্ছে। যে কোনোভাবেই হোক তাদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। সুতরাং চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ভয় নেই। তাদের সতর্ক থেকে সুরক্ষা নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে রোগীদের বলব, আপনারাও রোগের ব্যাপারে তথ্য গোপন করবেন না। তাহলে চিকিৎসক ও নার্সদের আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়বে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকিও বাড়ছে দিন দিন। বিভিন্ন জেলায় কোনো নির্দিষ্ট থানাতেই বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।শুধু তাই নয় খোদ ঢাকা মহানগরে পুলিশেরই (ডিএমপি) ৭৩ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিনজন পুলিশে কাজ করা সাধারণ কর্মচারীও রয়েছেন। ডিএমপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন এডিসি, তিনজন এসআই, একজন সার্জেন্ট, পাঁচজন এএসআই, তিনজন সাধারণ সদস্য ও বাকিরা কনস্টেবল বলে জানা গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের। এই বিভাগের উত্তর শাখার ১৪ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। পিওএস পূর্ব শাখায় আক্রান্ত ৬ জন। এরপর রয়েছে পুলিশের কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগ। এই বিভাগের ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পশ্চিম ট্রাফিক বিভাগেও ৯ জন আক্রান্ত।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মহানগর পুলিশের আটটি অপরাধ বিভাগ ছাড়াও পরিবহন, প্রটেকশন, উন্নয়ন, গোয়েন্দা, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপসহ ২১টি বিভাগের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডিএমপিতে বড় সংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, জাতীয় দুরোগে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।বেশ কয়েকজন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের যে সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন বলে তাঁরা মনে করছেন। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানায়ও কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিএমপির বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বড় একটি অংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে এক থানাতেই ৩০ জনের বেশি সদস্যের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর গাজীপুরে ৩৩ জন পুলিশ সদস্যের করোনা ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবদিকসহ ১৯সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সংগঠনের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সারা দেশে ১৬ জন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৯ জনই ঢাকার। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও এ ভাইরাসে আক্রান্ত।’ বিবৃতিতে নেতারা বলেন, করোনাভাইরাসের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সহায়তা ছাড়া সাংবাদিকরা শত ঝুঁকির মধ্যেও কাজ করছেন কেবলমাত্র পেশাগত দায়িত্ববোধ, পরিবারের ভরণপোষণের আর্থিক সুরক্ষা, প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রের কথা ভেবে।
অপরদিকে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন রক্ষী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আববার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আক্রান্ত কারারক্ষি বিভিন্ন হাসপাতালে প্রিজন সেলে দায়িত্ব পালন করতেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই প্রথম একজনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। কর্নেল আববার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বন্দীর মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪৩৪ জন। এতে দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩৮২। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৯ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে দেশে ১১০ জনের মৃত্যু হলো।


বিজ্ঞাপন