শতভাগ কর অব্যাহতির দাবি

অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শতভাগ কর অব্যাহতি চেয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। একই সঙ্গে সদস্যদের করহার হ্রাস, করমুক্ত লভ্যাংশ সীমা বাড়ানো ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের পরিমাণ কমানোসহ বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে এক্সচেঞ্জটি। আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে গতকাল এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত শতভাগ কর অব্যাহতি চেয়েছে ডিএসই। এক্ষেত্রে ডিএসইর যুক্তি হচ্ছে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের আগে এক্সচেঞ্জের আয় করমুক্ত ছিল। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় ডিএসইর পরিচালন মুনাফা এটির পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। এ অবস্থায় এক্সচেঞ্জের আয়ের ওপর করারোপ করা হলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এক্সচেঞ্জ লেনদেন ফির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হবে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপরই বর্তাবে। আর লেনদেন ফি বাড়লে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ কমে যাবে ও এতে সরকারের রাজস্বও অনেক কমবে। এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ১ কোটি টাকা নিট পরিচালন মুনাফা করেছে ডিএসই। এ অবস্থায় এক্সচেঞ্জের এই আয়ের ওপর করারোপ করা হলে পুঁজিবাজারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পরিচালন মূলধন ঘাটতিতে পড়তে হবে।
পুঁজিবাজারের মূল প্লাটফর্মে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের অগ্রিম আয়করের বিদ্যমান হার দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নতুন চালু করা এসএমই প্লাটফর্মের জন্য কোনো অগ্রিম আয়কর নির্ধারণ না করার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বন্ড মার্কেটের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের জন্য সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের লেনদেনের ওপর কোনো ধরনের করারোপ না করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করমুক্ত লভ্যাংশ সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর দ্বৈত কর পরিহারের জন্য লভ্যাংশের ওপর আদায়কৃত অগ্রিম আয়করকে আয়কর অধ্যাদেশের ৮২সি ধারায় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে এক্সচেঞ্জটি। মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করছাড় সুবিধার মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করার পাশাপাশি নতুন তালিকাভুক্ত বন্ডের ক্ষেত্রে তিন বছর মেয়াদে ১০ শতাংশ করছাড় সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করের পার্থক্য ১৫ শতাংশ থাকলে পুঁজিবাজারে আরো বেশিসংখ্যক বহুজাতিক ও স্থানীয় ব্লুচিপ কোম্পানি আসতে আগ্রহী হবে বলে মনে করছে ডিএসই।
কোভিড-১৯-এর জন্য ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে ব্যয়কে করের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৫ শতাংশ বিশেষ করহারে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ২ বছরের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বিএসইসি। সরকারি ট্রেজারি বন্ডের মতো উেস কর কর্তন ছাড়াই তালিকাভুক্ত বন্ডের মুনাফা বা সুদ পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান মূল্য সংযোজন করের (মূসক) হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। ২০১২ সালের মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইনে স্টক এবং সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দেড় শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি অব্যাহতির সুবিধাটি তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের পরিবর্তে অজড় সিকিউরিটিজের জন্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই।
চিঠিতে ২০১৮ সাল থেকে দেশের পুঁজিবাজারে নি¤œমুখী প্রবণতা চলছে উল্লেখ করে ডিএসই বলছে, বিদ্যমান সংকটের পাশাপাশি কভিড-১৯-এর কারণে যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা এক্সচেঞ্জের পারফরম্যান্সের ওপর নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ট্রেকহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, তারা অগ্রগতির পরিবর্তে অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়েছে। আর তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসই।


বিজ্ঞাপন