কখনোই শেষ হবে না করোনা

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

দেশে আক্রান্ত ১৮সহস্রাধিক

মৃত্যু বেড়ে ২৮৩

 

এম এ স্বপন : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে স্থবির পুরো পৃথিবী। দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ মারণ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। করোনার তা-বে বিশ্বজুড়ে এই যখন অবস্থা তখন হতাশার খবর দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান বলেছেন, আমার মনে হয়, আমাদের এক্ষেত্রে বাস্তবতা উপলব্ধি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই মহামারির শেষ কোথায়, এটা কেউ বলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কোভিড-১৯ হয়ত বিশ্ব থেকে কখনও নির্মূল হবে না।
বুধবার জেনিভায় সংস্থার নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে তার এই হতাশাজনক বক্তব্য আসে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান।
ব্রিফিংয়ে রায়ান বলেন, এক্ষেত্রে কোনো দিনক্ষণ নেই, কেউ আশা দিতে পারবে না। এটা আমাদের জন্য দীর্ঘ সমস্যা হিসেবে রয়ে যাবে, হয়ত কখনও নেই হয়ে যাবে না।
এদিকে মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০৪১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৮৩ জনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে আরও ৯ হাজার ৮৩৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৭ হাজার ৩৯২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৫১ হাজার ৯৩০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ১ হাজার ৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৮৩ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ১১ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। ৯ জন ঢাকার এবং ৫ জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। বয়সের দিক থেকে একজন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী, একজন ত্রিশোর্ধ্ব, পাঁচজন চল্লিশোর্ধ্ব, পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং দুজন সত্তরোর্ধ্ব। বুলেটিনে নতুন করে সুস্থ কেউ হয়েছেন কি-না, সে তথ্য জানানো হয়নি। সে হিসেবে এ সংখ্যা তিন হাজার ৩৬১-ই থাকছে।
একদিন আগে গত বুধবার একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে জানানো হয়, গেল ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এছাড়া নতুন ১১৬২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত পড়েছে।
ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি। অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি চীনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়তো ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। ফলও দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দেশগুলোর তালিকার মাঝেই নেই চীন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি, যা এখনও অব্যাহত আছে। পঞ্চম দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয় ৫ মে পর্যন্ত। তার আগেই আরেক দফা ছুটি বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়। চলমান এ ছুটি আরেক দফা বাড়ি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সপ্তম দফায় ছুটি বাড়িয়ে এ আদেশ জারি করা হয়।
যদিও ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে খুলে দেয়া হয়েছে মসজিদ এবং দোকানপাট-শপিংমলও।
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৫ জন। এছাড়া এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৪৪ লাখ ২৯ হাজার ২২৩ জনের শরীরে।
আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৯ জন। এদের মধ্যে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৬৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৪৫ হাজার ৯২০ জনের অবস্থা গুরুতর।


বিজ্ঞাপন