ত্রিমুখী বিপদের শঙ্কা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

শনাক্ত দেড় সহস্রাধিক

 

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : দেশ থেকে ‘লকডাউন পরিস্থিতি’ তুলে দিলে ত্রিমুখী বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় অফিস-আদালত, গণপরিবহনসহ সব কিছু খুলে দিলে ঝুঁকির মাত্রা বর্ণনা করতে গিয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী এ আশঙ্কার কথা বলেন।
তিনি বলেন, লকডাউন বা সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের চলাচলকে থামিয়ে দিয়ে তাদের ঘরে রাখা, একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের শারীরিক দূরত্ব তৈরি করা। এই দুটো কাজের মাধ্যমে চেইন অব ইনফেকশান (সংক্রমণের ধারা) ভেঙে ফেলা যায়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হচ্ছে- যতদিন পর্যন্ত ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে থাকবে ততদিন এটা করতে হবে। সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তখন লকডাউন, বিচ্ছিন্নতা, অবরোধ বা সাধারণ ছুটি যাই হোক না কেন, সংক্রমণ কমার হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধাপে ধাপে শিথিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে, সরকার যখন ‘লকডাউন পরিস্থিতি’ আরোপ করে, তখন ‘লকডাউন’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। এ বিষয়ে তাদের কোনো ব্যাখ্যা হয়তো আছে, যা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো। মানুষ প্রথম দিকে এটাকে লকডাউন হিসেবে গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে এটাকে সাধারণ ছুটি হিসেবেই গ্রহণ করেছে। ফলে জনসমাগম কিছুটা কমলেও পুরোপুরি কমলো না।
সবকিছু খুলে দিলে কতটা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু খুলে দিলে বিপদ হবে ত্রিমুখী। প্রচুর মানুষ অসুস্থ হবে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে এবং একই সঙ্গে মৃত্যু ঘটবে। এই অসুস্থতার কারণে মানুষের মধ্যে ভালো থাকার যে অনুভূতি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এসব মানুষের চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের গতি যখন উর্ধ্বমুখী তখন লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করে অফিস আদালত, সীমিত আকারে গণপরিবহন ও মার্কেট-দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ দিকে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬১০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৬৪ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০৮।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন পড়েন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৫০টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নয় হাজার ৯৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও এক হাজার ৭৬৪ জনের দেহে। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৮ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩৬০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৩৭৫ জনে।
গত শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন মারা গেছেন। ১১ হাজার ৩০১টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৫২৩ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। এটি যৌথভাবে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে আরও একদিন ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে তথ্য জানানো হয় গত ২২ মে’র বুলেটিনে।
বরাবরের মতোই বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার থেকে খুলে যাচ্ছে সব অফিস-আদালত। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহনও।
অন্যদিকে বিশ্বে ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১১১ জন মারা গেছেন অন্যদিকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৬২৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩০ লাখ ৭ হাজার ৫৯০ জনের মধ্যে ৫৩ হাজার ৭৫৪ জনের অবস্থা গুরুতর।


বিজ্ঞাপন