হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ

রাজধানী রাজনীতি স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘চিকিৎসার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।


বিজ্ঞাপন

‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে’ এমন বিষয়ে সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘যারা এই সময়ে রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পিছ-পা হচ্ছে এবং তাদের অবহেলার কারণে রোগীরা মৃত্যুবরণ করছে, তারা আসলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। আমি আশা করবো যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোসহ কোন হাসপাতালই এ ধরণের আচরণ করবে না। এখনই সময় আর্তমানবতার সেবায় হাতকে প্রসারিত করা।’


বিজ্ঞাপন

‘তবে অনেক ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এই পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই, তারা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য, মানুষকে সেবা না দিয়ে হাসপাতাল যদি হাত গুটিয়ে নেয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যথিত যে, প্রায়ই আমরা কাগজে ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি- বিভিন্ন রোগীরা একটার পর আরেকটা হাসপাতালে যাচ্ছে, কিন্তু হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না। আজকেও কাগজে দেখলাম, সিলেটে একে একে ছয়টি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন রোগী গেছেন, তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। সেই রোগী শেষে এম্বুলেন্সের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক এবং প্রাইভেট বা যেকোন হাসপাতালের এ ধরণের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।’

এবিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে, ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কেউ রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে অবহেলা করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখনও পর্যন্ত হুঁশিয়ারির মাধ্যমে তাদেরকে সেবামুখী করার চেষ্টা করা হলেও অবহেলার ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকলে অতি শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’

এসময় সম্প্রতি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে বলেছে, এখানে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফলতি ছিল। সুতরাং যে পাঁচজন মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর দায় কোনভাবেই ইউনাইটেড হাসপাতাল এড়াতে পারে বলে আমি মনে করি না।’

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের করুণ পরিস্থিতি

উপস্থিত সাংবাদিকেরা এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের পর চলমান স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না, কারণ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

‘আমি এবিষয়ে বলতে চাইনি, কিন্তু যেহেতু আপনারা প্রশ্ন করেছেন এবং যেহেতু বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দেয়, মানবাধিকার নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলে, এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার নিয়েও তারা প্রতিবছর রিপোর্ট পেশ করে, সেজন্য বলছি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘সেখানে গত ২৫ মে পুলিশ যেভাবে একজন আফ্রিকান-আমেরিকানকে গলার ওপর চেপে ধরে তাকে হত্যা করলো, এটি সেখানকার মানবাধিকারের কি পরিস্থিতি, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা অনেক কম হলেও পুলিশের হাতে মৃত্যুবরণকারী কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা শ্বেতাঙ্গদের তিনগুণ, উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া আপনারা জানেন যে, সেখানে যারা অভিবাসী হতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে, তাদের সন্তানদের বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাবা-মাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শিশুদেরকে আটকে রাখার পর দেখা যায়, তারা তাদের বাবা-মাকে চেনে না। এসব অমানবিক কাজই সেখানকার মানবাধিকারের পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।’