লকডাউন কার্যকরে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশাসন
বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকা ও বরিশাল জেলার রেডজোন মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়াের্ডর মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডকেই রেডজোন হিসবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলাকে রেডজোন শনাক্ত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে করপোরেশনভুক্ত পুরো এলাকা সম্পূর্ণ লকডাউন করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পাশাপাশি জেলার রেডজোনগুলোও পুরোপুরি লকডাউনের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয় বলে জানা গেছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, জেলায় ১০টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা ইয়োলো ও দুটি উপজেলা এখন পর্যন্ত গ্রীণ রয়েছে। অর্থাৎ কম সংক্রমিত উপজেলা ৬টি এবং নিরাপদ এলাকা দুটি উপজেলা। ওদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে এসব বিষয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সিভিল সার্জনকে ফোনে অবহিত করে তা ‘দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে’র জন্য বলা হয়েছে। জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডই রেড জোনের মধ্যে রয়েছে। কেবলমাত্র ২৬, ২৭ ও ৩০নং ওয়ার্ড গ্রীন বা নিরাপদ জোনের তালিকায় রয়েছে।আর বরিশাল জেলার হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা হচ্ছে গ্রীন বা নিরাপদ জোন। ইয়োলো বা কম সংক্রমিত জোনের তালিকায় রয়েছে, আগৈলঝাড়া, বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী, মুলাদী, বরিশাল সদর, উজিরপুর। আর রেডজোন উপজেলাগুলো হচ্ছে, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া ও বাকেরগঞ্জের একটি ওয়ার্ড। জোনিংয়ের জন্য মূলত সংক্রমণের হারকে মানদ- ধরা হয়। রেডজোনের জন্য ১৪ দিনে ১ লাখ মানুষের মাঝে যদি ১০ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। ইয়োলো জোনের জন্য ১৪ দিনে ১ লাখ লোকের মধ্যে যদি ৩ অথবা ৯ জন করোনা পজেটিভ লোক পাওয়া যায় এবং গ্রীণ জোন হলো ১৪ দিনে যদি ১ লাখ লোকের মধ্যে ২ জন লোকের করোনা পজেটিভ আসে। সে হিসেবে বরিশাল জেলায় ৩১ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বাবুগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪২৩ জনের মধ্যে ১৯ জনের করোনা পজেটিভ। ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৯ জন জনসংখ্যার মধ্যে ১৭ জন করোনা পজেটিভ হওয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বানারীপাড়া। রেডজোনের তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাকেরগঞ্জের একটি ওয়ার্ড। সেখানে ৩০ হাজার ২ জন বাসিন্দার মধ্যে ৩ জনের করোনা পজেটিভ। এছাড়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রেডজোন ২৭টির মধ্যে সবচেয় বেশি সংক্রমিত ১১ নং ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের ১৪ হাজার ৬১১ জন বাসিন্দার মধ্যে ৮৮ জনের করোনা পজেটিভ। ১২ নং ওয়াের্ড ৫ হাজার ৭৯০ জনের মধ্যে ৮১ জন পজেটিভ। ১৬ নং ওয়ার্ডে ৬ হাজার ৩৬০ জন বাসিন্দার মধ্যে ৭৪ জনের করোনা পজেটিভ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৮ জনের বাসিন্দার মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৪২ জন করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক আমাকে ফোন করে তাদের দেওয়া নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সুপারিশ করে বরিশালের সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কবে থেকে এই লকডাউন শুরু হবে সে সম্পর্কে জেলা সিভিল সার্জন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক এখনও কিছু জানাননি। রেডজোনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেখানে ‘রেডজোন’ হবে সেই এলাকাকে ব্লক করা হবে। ওই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। রেড জোনে লকডাউন বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন। এছাড়া ‘রেডজোনে’ দেওয়া লকডাউন ১৪ থেকে ২১ দিনের জন্য প্রযোজ্য হবে। লকডাউন এলাকায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বুথ এবং চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। খাবার, ওষুধ ও বাজারের সব ব্যবস্থা ভেতরেই করা হবে। সবদিক থেকে ওই এলাকাটিকে ঘিরে দেওয়া হবে যাতে মানুষ বাইরে বের হতে এবং বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে না পারে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহবুদ্দিন বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে নির্দেশনা কার্যকরের জন্য বেশ কিছু পূর্ব প্রস্তুতি ও বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। তা সম্পন্ন করার পরই লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও বেশ কিছু মহলের সঙ্গে আলোচনার করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, রেডজোন হিসাবে চিহ্নিত এলাকা লকডাউন করার ক্ষেত্রে প্রদত্ত সকল শর্ত শতভাগ কার্যকর করার নির্দেশনা এসেছে। সেভাবেই সকল কর্মকা- এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।