*সুস্থ রোগীদের হার্টে নতুন সমস্যা
*দেশে করোনায় তিন হাজার মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মহা সংকটে পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যতগুলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তার মধ্যে করোনা ভাইরাসকেই সবচেয়ে মারাত্মক বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস।
সংস্থাটির প্রধান জানিয়েছেন, সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য এ সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমারজেন্সি কমিটির সভা আহ্বান করবেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গেব্রিয়াসুস।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৩০ জানুয়ারি যখন আমি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করি, তখন চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশরও কম এবং কোন মৃত্যুও ছিল না। কোভিড-১৯ আমাদের দুনিয়া বদলে দিয়েছে। এটি মানুষ, সম্প্রদায় আর দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছে আবার তাদের বিচ্ছিন্ন হতেও বাধ্য করেছে।’
সুস্থ রোগীদের হার্টে নতুন সমস্যা: বিশ্বজুড়ে মারাত্মক সংকট তৈরি করে রেখেছে করোনাভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাসের সঠিক চিকিৎসা, এর ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
প্রতিনিয়ত করোনা নিয়ে নতুন নতুন তথ্য আসছে আমাদের সামনে। ফলে আমরা করোনা নিয়ে আরও সচেতন হতে পারছি এবং এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে যেন নিজেরা বাঁচতে পারি সেভাবে জীবন-যাপনের চেষ্টা করছি।
এদিকে, করোনা নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু তথ্যে নতুন করে আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও বেশ কিছু রোগীর হৃদযন্ত্রে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন রোগীদের তিন চতুর্থাংশের মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা গেছে। এমআরআই রিপোর্টে তাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন জার্মানির জামা কার্ডিওলজির একদল চিকিৎসক।
এদিকে ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ফ্রাঙ্কফুটের চিকিৎসক ডা. ভ্যালেন্তিনা পান্টমান রয়টার্সকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হৃৎযন্ত্রে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ৪৫ থেকে ৫৩ বছর বয়সী প্রায় ১শ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, এদের মধ্যে ৭৮ জনেরই হৃদপিন্ডের পেশী এবং অন্যান্য অংশে প্রদাহ দেখা দিয়েছে।
দেশে করোনায় তিন হাজার মৃত্যু : দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩৫ জন। ফলে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা মিলেছে আরও দুই হাজার ৯৬০ জনের দেহে। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন দুই লাখ ২৯ হাজার ১৮৫।
করোনাভাইরাস বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনন্দিন বুলেটিনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বুলেটিন পড়েন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ৮১টি পিসিআর-ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৭০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৭১৪টি নমুনা। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ১১ লাখ ৩৭ হাজার ১৩১টি। নতুন পরীক্ষায় করোনা মিলেছে দুই হাজার ৯৬০ জনের মধ্যে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ২৯ হাজার ১৮৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৫ জনের। ফলে ভাইরাসটিতে মোট মারা গেলেন তিন হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৭৩১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ২৭ হাজার ৪১৪ জনে।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বুলেটিনে বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।