অর্থ নয় দক্ষ জনবলের সংকট: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনেক অফিসারকে দেখেছি সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলতে চায়। এখন অর্থের কোনো সংকট নেই, দক্ষ জনবলই আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, এনার্জি সিকিউরিটি এবং আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ভার্চুয়াল এ আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপপা)।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের দক্ষ লোকের প্রয়োজন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেই সময়ে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ট্রেনিং করতে পাঠিয়েছিলেন অনেককে। এখনও তারাই বিভিন্ন সেক্টর পরিচালনা করছেন। অনেকে অনেক কথা বলেন, পদ্মা সেতু হতোই, বিদ্যুৎ হতোই। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, না হতো না, অনেক সরকার দেখেছেন তারাতো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলেনি, শেখ হাসিনা সরকার বলেছে। মুজিব বর্ষেই সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। অনেকে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেন। হ্যাঁ আমরা এখনও অনেক পেছনে। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে যাচ্ছি। পরশা একটি গ্রাম সেখানে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর রাত ১২টা পর্যন্ত বাজার চলে। আগে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে যেতো মা-বোনেরা। এখন রাত ৯টা পর্যন্ত কাঁথা সেলাই করে।
যেখানে ১১ঘণ্টাও লোডশেডিং হতো। এখন আমরা জেনারেটর ও আইপিএসের ব্যবসা উঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। হ্যাঁ গ্রামে এখন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারিনি। নদী, খাল, ঝড়-বাতাসে অনেক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছের ডাল পড়ে যায়।
পায়রাতে প্রথম যখন গেছি ধুধু বালু। প্রথম অনেকে অনেক কথা বলেছে। পাওয়ার প্লান্ট রেডি হওয়ার আগেই কয়লা এনেছি। আমেরিকাতেও অনেক প্লান্ট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি নেই, আমরা পায়রাতে করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে বিদ্যুতের কারণে। ১৩ জনের ওপরে লোক মারা গেছে। শত শত লোক আক্রান্ত হয়েছে এরমধ্যেও কাজ চলছে। কিছুটা ভুলভ্রান্তি থাকবেই। যদি প্রশংসা না করি তাহলে মাঠ পর্যায়ে লোকজন হতাশ হবে। আমরা পেপারলেস অফিস করতে চাই। আগামী ২ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ইআরপি হবে। জ্বালানিতেও করতে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কাগজপত্র দেখি আর ভাবি মাত্র সাড়ে তিন বছরে কিভাবে এতো কিছু করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বেশ অবাক লাগে, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, রাস্তা নেই, ব্রিজ নেই, টাকা নেই, মানুষের ঘরে খাবার নেই। বিশ্বে তখন ঠান্ডা যুদ্ধ চলমান, কোন দেশ কাকে নিবে তারও একটি লড়াই চলছিল। এখন অনেক বড় বড় দেশ বাংলাদেশকে সহায়তা করছে যারা তখন আমাদের সমর্থনে ছিল না।
সেই সময়ে নাইজেরিয়াসহ অনেক বড় বড় দেশ বিদেশিদের হাতে তাদের গ্যাস তুলে দিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আর্থিক অবস্থা, রাজনৈতিক ভিতটাও শক্তিশালী হয়নি তখন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ৫টি গ্যাস ফিল্ড কিনে নিয়ে ভিত রচনা করেছেন। ক্রাইসিসে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেই পথটা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই সাহসী সিদ্ধান্তের রিফ্লেকশন দেখতে পাই নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা।
তিনি বলেন, কয়লা তুলতে গেলে তার প্রভাব কি, শেখ হাসিনার কাছে প্রথম হচ্ছে মানুষ ও পরিবেশ। আমাকে বলেছেন, মানুষের ক্ষতি না করে যদি কিছু করতে পারো তবে দেখো। এই যে এলএনজি আমদানি করছি, এটা নিয়েও অনেক কথা। আমাদের গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিল্প বাড়ছে সেখানে গ্যাস দিতে হবে। হ্যাঁ দুর্নীতে কমাতে হবে। যতো আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়বো ততো দুর্নীতি কমবে। যে দেশে যতো প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। সেই দেশ দ্রুত এগিয়ে গেছে। আমরা আগে ইসিএ ফাইন্যান্সিং পাওয়ার প্লান্ট করেছি, এখন নিজেদের অর্থে করছি। নিজেদের অর্থে এলএনজি আমদানি করছি।
আগে তেল আসার পর বড় জাহাজ থেকে খালাস করতে ১২দিন লাগতো। এখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তেল আসবে। এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হচ্ছে। এতে ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে আনতে লোকসান হয়। ভেজাল হয় এটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এটাও কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তার অংশ। পতেঙ্গায় টার্মিনাল করছি, বাঘাবাড়িতে টার্মিনাল করছি। পাইপলাইনে তেল আসবে নারায়ণগঞ্জে, সেখান থেকে এয়ারপোর্টে। অনেকে বলেন সোলার দিয়ে বিদ্যুৎ করতে পারি। ১শ মেগাওয়াট বিদ্যুতে ৩’শ একর জমি লাগে। আমাদের উর্বর জমি কি বিদ্যুতের জন্য ব্যবহার করবো।
এলএনজি আমদানিতে স্পর্ট মার্কেটের কথা বলেন। স্পর্ট মার্কেট কিন্তু অনেক উঠানামা করে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কিন্তু ভিন্ন কথা। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন তেলের দাম কমান না কেনো। তেলের দাম কমালে লাভ কার। গাড়িতে ব্যবহার হয়। গাড়ি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত। এই যে বিদ্যুতের তেল আমদানিতে ডিউটি ধরেছে এতে বিদ্যুতের মূল্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। হ্যাঁ পাবলিক ট্রান্সপোটে ব্যবহার হয়। তারা যদি দাম কমায় তাহলে কমাতে পারি।
গাড়িতে তেল ব্যবহার করলে তার ইফিসিয়েন্সি ২০ শতাংশ। আর বিদ্যুতের ইফিসিয়েন্সি ৮০ শতাংশ। আমরা যদি বাস, ট্রেন ইলেকট্রিক্যাল করতে পারি তাহলে বছরে ২ বিলিয়ন ডলার সেভ করতে পারবো। এখানে কাজ করতে হবে, আমরা বৈদ্যুতিক বাস চালু করবো। বেসিক তেলের জায়গা কাজ করার জন্য রিফাইনারি ইউনিট-২ করা হচ্ছে।
বাপেক্সকে শক্তিশালী না করার সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাপেক্সকে বলেছিলাম তোমরা কি হবা, ড্রিলিং কোম্পানি, অনুসন্ধান কোম্পানি, নাকি সব। সেইভাবে অর্গানোগ্রাম চেঞ্জ করো। ৫ বছরেও তারা তা শেষ করতে পারেনি।
আমার মন্ত্রণালয় একমাত্র মন্ত্রণালয় যেখানে ইন্টার্নশিপ করা হচ্ছে। বছরে ৩’শ ছেলে মেয়েকে ইন্টার্নশিপ করাচ্ছি। বড় বড় জিনিস দেখে তারা ধারণা পাবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। সুশাসন যাতে থাকে সেদিকে নজর রয়েছে। স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করবো। সবার অনীহা, আগামী নির্বাচনের আগে এক-দেড়কোটি বসবে। তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল নিতে হবে না। করোনায় বিল না দেওয়ায় বিষয়টি শাপে বর হয়েছে। এখন বিতরণ কোম্পানিগুলো আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সাবেক একান্ত সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, বাপেক্সের সাবেক এমডি মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী, বিপপার চেয়ারম্যান ইমরান করিম প্রমুখ।


বিজ্ঞাপন