পিডি-ডিসি’র ঠেলাঠেলি ব্যাহত উন্নয়ন প্রকল্প

এইমাত্র জাতীয় শিক্ষাঙ্গন

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : কারিগরি শিক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ও ডিসি অফিসের ঠেলাঠেলিতে ভেস্তে যাওয়ার আসঙ্কায় ৩ হাজার ৬৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্পটি। এর ফলে একই সাথে ব্যাহত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা কাজ।
প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় ২ বছর হয়ে গেলেও এখনো অন্ধকারে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের ভাষ্য হচ্ছে ২০১৭ সালের মেন্যুয়াল অনুযায়ী সকল কাগজপত্র ডিসি অফিসে পাঠালেও কোন সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রেরণ করার পরে জেলা প্রাশাসককে বার বার তাগিদ দেওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত কোন আগ্রগতি পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডিসি অফিস বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, প্রকল্প পরিচালকের প্রস্তাব অসম্পূর্ণ থাকায় এমনটি হচ্ছে। আমারা গত ২৪-১০-২০১৯ তারিখে প্রকল্প পরিচালক বরাবরে একটা চিঠি দিয়েছি যে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সংশোধনপূর্বক নতুন করে প্রস্তাব দাখিলের জন্য। এর জবাবে এখন পর্যন্ত উনি কোন চিঠি পাঠাননি।
এদিকে এই প্রকল্প পিছিয়ে পড়লে টিভিইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ; দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকুরি বাজারের চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার বড় বড় বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিলেও সংশ্লিষ্টদের দূরদর্শিতা ও দক্ষতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য যেসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয় তা চিহ্নিত করে নিরসনের উপায় খুঁজতে হবে।
এ বিষয়ে ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মো. জামাল হোসেন সকালের সময়কে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১১টি জেলার ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পেরেছি। বাকি ১২টি জেলাতে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের মেন্যুয়াল অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় সকল জেলায় সব কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই কাগজ অনুযায়ী কিছু জেলার ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেও কয়েকটি জেলায় ঝাঁমেলা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। ওখানে কেউ তৎপর না। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজ দেওয়া সত্ত্বেও তারা গড়িমশি করছে। চুয়াডাঙ্গা ডিসি অফিস থেকে কোন সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না। পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রেরণ করার পরে জেলা প্রাশাসককে বার বার তাগিদ দেওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত কোন আগ্রগতি পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, জুন পর্যন্ত করোনার কারণে আমি যোগাযোগ করতে পারিনি। দুই মাস আগে যোগাযোগ করে আমি তাদেরকে যখন বলি ২০১৭ সালের মেন্যুয়াল অনুযায়ী কোন কাগজ বাকি আছে কিনা আমাকে জানান তখন ডিসি অফিস থেকে জানানো হয় আমরা জানাচ্ছি। জানাচ্ছি বলে দুই মাস আর কোন খোঁজ নেই।
তিনি বলেন, এখন আমার মনে হচ্ছে তারা জমিটা দিতে চাই না। তারা আমাদেরকে সঠিক বিষয়টাও জানাচ্ছে না। যদি জনগণ জায়গা দিতে না চাই; তাহলে তো আমাদেরকে জানাতে হবে; যে ওই জমিতে সমস্যা হচ্ছে, আমরা জমিটা দিতে পারছি না। তারা আমার কাছে চিঠিও দেইনা আবার যোগাযোগও করে না।
ডিসিকে একবার ফোন দিলাম তিনিও একই কথা বলে। আমি তখন বললাম আপনি কি সকল কাগজ পড়ছেন? ২০১৭ এর মেন্যুয়াল পড়ে আমার পুর্নাঙ্গ প্রস্তাবের সাথে মেলান এর পরে যদি কোন কাগজ লাগে তাহলে আমি দেব।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি অধিগ্রহণ, স্থানীয় সরকার শাখা ও মিডিয়া সেল) শিবানী সরকারকে বলেন, প্রকল্প পরিচালকের প্রকল্প প্রস্তাবটি সম্পুর্ণ না। এজন্য আমারা গত ২৪-১০-২০১৯ তারিখে প্রকল্প পরিচালক বরাবরে একটা চিঠি দিয়েছি যে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সংশোধনপূর্বক নতুন করে প্রস্তাব দাখিলের জন্য। এটার জবাবে এখন পর্যন্ত উনি কোন চিঠি পাঠাননি। সকল কাগজ প্রস্তুত করে প্রকল্প পরিচালককে ইমেইল করেও পাঠিয়েছি শুধুমাত্র সিগ্নেচার করে পাঠানোর জন্য। কিন্তু উনি তাও করে পাঠাননি। এখন উনি যদি বলেন ডিসি অফিসের কারণে ভূমি অধিগ্রহণ পিছিয়ে পড়ছে তাহলে ওনার কাছে আমার প্রশ্নটি হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কি কারণে এমনটা হচ্ছে কেন খতিয়ে দেখছেন না? উনি এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় আসেনি। এমনকি কোন প্রতিনিধিও পাঠাননি।
তিনি বলেন, যে প্রত্যাশী সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করবে ডিসি অফিসের চেয়ে তাদের দায়টা বেশি। ডিসি অফিস ওখানে কিছুই করবে না। আমরা সব ধরণের সহযোগিতা দিতেই প্রস্তুত; কিন্তু আমাদের হাতে পেপার্সগুলো ঠিকমত হাতে পৌঁছাতে হবে।
এছাড়া কোন পেপার্স তৈরি করতে আমাদের সহযোগিতা লাগলেও আমরা করতে প্রস্তুত। পেপারস না দিয়ে ওখান থেকে উনি যদি মৌখিকভাবে বলে তাহলে তো সমস্যা। ২৪ অক্টোবর আমি একটা চিঠি দিয়েছি তারপরে টাইম ডিলে কেন হলো? সেটার যৌক্তিক উপস্থাপনা লাগবে। কাজ করতে হলে ওনাকে আসতে হবে অথবা প্রতিনিধি পাঠাতে হবে এবং প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে আইএমইডির মহাপরিচালক এসএম হামিদুল হক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ বারবার সংশোধনের প্রবণতা রয়েছে। কোনো একটি প্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে না পারলে ওই প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তিতে যেমন বিলম্ব ঘটে, একইভাবে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়। তিনি বলেন, উন্নয়নকে কাঙ্খিত মানে পৌঁছাতে হলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও বারবার সংশোধনের সংস্কৃতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। যেসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিঘিœত হয়, তা চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।


বিজ্ঞাপন