ঢাকার সড়কে পানি থৈ থৈ

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতার প্রথম দু’লাইন এটি। বৈশাখে নদীতে পানির থৈ থৈ দেখতে এখন আর গ্রামে যেতে হয় না। বিগত কয়েক বছরে ব্যাস্ত নগরীর ঢাকায় যারা বসবাস করছেন তারা ভালো করেই রাজধানীর সড়কে পানির থৈ থৈ উপভোগ করে থাকেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয় ঢাকায়। প্রায় ২৫ মিনিটের বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গেছে তলিয়ে। তাতে ঢেউ ভেঙে যানবাহনের চলাচল জলে ভ্রমণের আমেজ তৈরি করছে, তবে তা নিরানন্দের।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে পানিতে ঢেউ খেলার দৃশ্য দেখে কবির আহমেদ নামের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ি বলে ওঠেন, “এটা কোন নদী ভাই?” পাশের আরেকজন ব্যবসায়ি রসিকতার সুরে জবাব দেন, ‘এটা ঢাকা নদী। এই নদীতে এখন মাছ চাষ করে অর্থ উপার্জন করা যায়।’ তখন সড়কটির ফুটপাতেও পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
শুধু বঙ্গবাজার নয়, সামান্য এই বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় পানি উঠেছে। তবে এই বৃষ্টিবাদলের মধ্যে সড়কে যান চলাচলের কমতি ছিল না। গতকাল দুপুরের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানীর নানা সড়ক। এতে নাগরিক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বৃষ্টি হলে নগরীতে এমন দুরবস্থার চিত্র নতুন নয়। আর জলজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা সেবা সংস্থা ঢাকা ওয়াসা এর দায় থেকে বাঁচতে বরাবরই নানা অজুহাতের আশ্রয় নেয়।
ভুক্তভোগীদের মতে, নগরীর এই সমস্যা অনেক দিনের। সেবা সংস্থাগুলোর খামখেয়ালীপনা তাদের নিয়মিত ভোগাচ্ছে। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে চান নগরবাসী। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এবার নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব নিতে চাইলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ প্রসঙ্গে মেয়র তাপস বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর অর্পিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা সে দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দায়িত্ব আমাদেরকে (সিটি করপোরেশন) দিন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এই ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব।
উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় অন্তত ৫২৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে তিনটি পাম্পস্টেশনের (পানি নিষ্কাশনের জন্য) জন্য ব্যয় করেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই সরকার ওয়াসাকে দিয়েছে ৫ কোটি টাকা। এতে ১৫ মাসে মোট ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজধানীর পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে। প্রশ্ন হলো, এই টাকা খরচ করে কী লাভ হলো? অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, রাজধানীর দুটি সিটি করপোরেশনের অধীনে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি নর্দমা রয়েছে। এর মধ্যে পানি নিষ্কাশনের জন্য ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নালা ও পাইপলাইন দিয়ে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন খালে যায়। নালা ভরাট হয়ে থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। ভূ-উপরিভাগের নালা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আবার ওয়াসার পাম্পের নিষ্কাশনক্ষমতা কম হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে- এমন তথ্যও সামনে এসেছে। সার্বিকভাবে রাজধানীর জলাবদ্ধতার জন্য রাজধানীর জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া, নিষ্কাশনব্যবস্থার ত্রুটি, সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্টদের উদানীসতাকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যেত না। এখন ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও রাজধানীর সবগুলো সড়কে পানি জমে। কেন এই পরিস্থিতি? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ প্রকল্পের সাবেক এক পরিচালক এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে পানি নামার সব পথই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে ভেতরের পানির চেয়ে বাইরে যেখানে গিয়ে পানি পড়ে তার উচ্চতা কম ছিল। এখন বাইরে নদীর পানিই উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সেচ করে পানি বাইরে পাঠাতে সময় লাগছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়ছেই। এরপরও টেকসই সমাধানে সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। শুধু মিটিং আর নির্দেশেই আটকে আছে এ সংক্রান্ত কাজ। এ অবস্থায় এবারও বর্ষা রাজধানীতে বড় দুর্ভোগের কারণ হতে পারে বলে শঙ্কায় আছেন নগরবাসী। গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ঢাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন