নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমাদের বাজারের পাশাপাশি ভারতের বাজারেও ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এ জন্য এ বছর রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। প্রয়োজনে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর নিজ দফতরে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে তিন সদস্য প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ আমদানিতে পাঁচ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি টিম আমদানির স্থানগুলোতে যেমন-বেনাপোল ও হিলিতে যাবে। সেখানে দেখবে আমদানির কী অবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘(পেঁয়াজের) একটু দাম বেড়েছে বাজারে। বন্যার কারণে সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। আমরা খুব চেষ্টা করছি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বড় পরিসরে নামছে। আগামী ১৩ তারিখ থেকে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে। আমরা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করব। আমরা ফুল মনিটর করছি, দেখা যাক।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘গতবছরের পেঁয়াজ আর এবছরের মধ্যে পার্থক্য হলো গতবছর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার কিন্তু বন্ধ করেনি। গতবছর বন্ধ করার পরে আমাদের এখানকার ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে। ভারতেও তখন ১৫০ রুপিতে (কেজিপ্রতি) পেঁয়াজ বিক্রি করেছিল। এ অঞ্চলে সমস্যা হয়েছিল তবে আমাদের সাফারিং বেশি হয়েছে। এরমধ্যে ভালো দিক হলো ভারত বন্ধ করে দেয়ার ফলে আমরা নতুন বাজার থেকে আমদানি করতে শিখেছি।’
তিনি বলেন, ‘তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশ থেকে গতবার পেঁয়াজ আসার কারণে এবারও আমাদের লোকজনের যোগাযোগ ভালো আছে। আমরা তুরস্ক থেকে আমদানির জন্য টেন্ডারও করেছি টিসিবির মাধ্যমে। পেঁয়াজ আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, পাঁচ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হবে।’
‘কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়েছে তাহলে এখনই সংকট কেন?’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেশি হওয়া মানেই আমাদের ফুল টার্গেট হয়েছে তা কিন্তু নয়। আমাদের ঘাটতি রয়েছে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে কৃষক কিছু দামও পেয়েছে। তারপরও আমাদের ঘাটতি রয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টন। এক বা দুই বছরে আমরা এটা কাভার করতে পারব না। পাশাপাশি আমাদের চাহিদা বাড়ছে। ফলে আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বাইরের বাজারের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি ছোট সমস্যা হয়েছে-মিয়ানমার থেকে আমরা যে পরিমাণ গত ক্রাইসিসে পেয়েছি সেটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কোভিডের কারণে। গতকালকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের সচিবের কথা হয়েছে। আমরা সবগুলো পথ খুলে দিতে চাইৃযতদ্রুত ও বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা যায়। আমাদের তরফ থেকে সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।’
এদিকে পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু হয়। এরপর শনি ও রোববার দুই দিনেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথম দফায় শুক্রবার কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে ১০ টাকা। শনিবার বাড়ে ১৫ টাকা এবং রোববার কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়ে। তখন থেকেই পেঁয়াজের বাজারে নতুনভাবে অস্থিরতা তৈরি হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবারের আগে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। যা শুক্রবার বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়। শনিবার ও রোববার দাম বেড়ে তা এখন ৬৫-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি শুক্রবারের আগে ছিল ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। এখন তা ৬০ টাকা হয়েছে।
এদিকে গতবছর দেশে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মূল্যবৃদ্ধির শুরুটা হয়েছিল এই সেপ্টেম্বরেই। ভারত প্রথমে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা।
ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম মূল্য প্রতি টন ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। আর ৩০ সেপ্টেম্বর রফতানি নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে শতক, দ্বিশতক হয়। নভেম্বরে ৩০০ হাঁকায় পেঁয়াজ। তখন মিয়ানমার, চীন, মিশর ও পাকিস্তান থেকে নানা রঙের পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সরকার। আকাশপথেও আমদানি করতে হয়।