নড়াইলে পিআইও অফিসের কোটিপতি কেরানি বহাল তবিয়তে

অপরাধ সারাদেশ

এমপি মাশরাফীর নির্দেশ উপেক্ষিত

 

মো: রফিকুল ইসলাম, নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অফিসের অফিস সহকারী মো:মনিরুজ্জামান মুকুল সামান্য কেরানি থেকে আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক এবং নিজে চলাফেরা করেন ভিআইপি স্টাইলে।
মনিরুজ্জামান হঠাৎ করেই এত সম্পদের মালিক হওয়ায় নড়াইল জুড়ে বইছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এ বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে,নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নির্দেশ উপেক্ষা করে এখনো বহাল তবিতে রয়েছেন পিআইও অফিসের অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান মুকুল।
অফিসের বস থেকে শুরু করে পাত্তা দেন না কাউকে।
মাশরাফীর মতো প্রভাবশালী এমপিকে অমান্যকারী অফিস সহকারীর খুঁটির জোঁর কোথায় এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে নড়াইলের অলি-গলিতে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উক্ত কোটিপতি অফিস সহকারী মনিরুজ্জামানের দ্রুত বদলীসহ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ জানিয়ে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ডিও লেটার প্রদান করেছেন ৯৪, নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
তিনি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অধিদপ্তরে প্রেরিত তদান্তাধীন বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ পিআইও,ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশের কথাও উল্লেখ করেছেন তাঁর ডিও’তে।
অপরদিকে,গত (১৬ আগস্ট) তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় নড়াইলের জনৈক ব্যবসায়ী মিলন খান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারো নলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো:মকসেদ মোল্যার ছেলে মো:মনিরুজ্জামান মুকুল পিআইও অফিসের ১৫ হাজার ৯৬০টাকা বেতনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি গত ১০বছরে বরগুনা,মাগুরা,নড়াইল সদর ও লোহাগড়া পিআইও অফিসে চাকুরী করেছেন।
বর্তমানে লোহাগড়া পিআইও অফিসে তিনি একাই একশ।
কাউকে তোয়াক্কা না করে দুই হাতে অবৈধ পন্থায় কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা।
অফিস সহকারীরর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় অবৈধ লেন-দেনের বিনিময়ে অর্জিত টাকা দিয়ে লোহাগড়া পৌর শহরের মদিনা পাড়ায় ৮ শতক জায়গার ওপর কোটি টাকায় বিলাসবহুল একটি দ্বিয়তলা আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি এগারো নলীতে আরো একটি দ্বিয়তলা বাড়ি নিমার্ণ করেছেন। পাশাপাশি তার নিজ নামে মাগুরা পৌর শহরের পার নান্দুয়লী গ্রামে ৭ শতক দামি জমি,বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের পাশে এক খন্ড জমি,লাহুড়িয়া মৌজায় ২৪ শতক করে দু’টি জমি,এগারো নলীতে আরো ৩০ শতক জমিসহ বিঘায় বিঘায় সম্পত্তি ক্রয় করেছেন।
এ ছাড়া নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে,রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্সও,তার টাকায় দুই সহোদর ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।
তিনি অনৈতিকভাবে তার মালিকানাধীন দু’টি বিলাস বহুল বাড়িতে দুটি ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সরকারি স্ট্রিট লাইট ও একটি লক্ষাধিক টাকা মূল্যের এসিডিসি বসিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,মনিরুজ্জামানের ওই সমস্ত সম্পদের আনুমানিক মূল্য হবে পাঁচ কোটি টাকা । এসকল সম্পত্তি তিনি কিভাবে অর্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে রহস্যজনকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে ধীরগতিতে তদন্ত কাজ এগুচ্ছে,এমনকি নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফীর সুপারিশ ১০দিন অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি এখনো।
তার খুঁটির জোরটা বেশ শক্ত বলে বিশ্বস্ত সূত্রের অভিযোগ রয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও চলেন রাজার হালে, উঠা-বসা,চলাফেরা হাই-প্রোফাইল লোকদের সঙ্গে। স্থানীয় প্রভাব আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পিআইও অফিস থেকে অন্যের নামের লাইন্সেসে বিভিন্ন সময়ে অনেক কাজ বাগিয়ে নেন।
বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে অশোভন আচারণ করে তাদের কাজের থেকে মাসোহারা নেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান মুকুল শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন,‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে।
আমি কখনো কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না,তবে আমার নামে বর্তমান বাজার মূল্যের ৫০-৬০লাখ টাকার সম্পদ আছে।
যা আমি বর্তমান চাকুরীর আগে ও পরে বৈধভাবে টাকা আয় করে রেখেছি।
আমার নামে অভিযোগকৃত কোটি কোটি টাকার সম্পদের কোন অস্তিত্ব নেই।
মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দুদক কর্তৃক অর্পিত তদন্ত সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা শুক্রবার দুপুরে বলেন,‘অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত আছে,তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।


বিজ্ঞাপন