আজকের দেশ রিপোর্ট : বাংলাদেশে কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ দশমিক ৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি পরিচালিত ‘কভিড-১৯ মহামারীকালে কার্যকর মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ওয়েবিনারের মাধ্যমে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
চলতি বছর ২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট সময়কালে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৮ দশমিক ৫ ভাগ মনে করেন, অধিকাংশ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী একবার ব্যবহারযোগ্য। ৮৩ দশমিক ৭ ভাগের মতে, অধিকাংশ মানুষ এসবের সঠিক অপসারণ সম্পর্কে সচেতন নন। ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ মানুষ মনে করেন, বাসাবাড়ির বর্জ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মেশানো উচিত নয়। এজন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি দরকার বলে মনে করেন ৯২ দশমিক ৪ ভাগ মানুষ।
জরিপে স্বাস্থ্য খাতে সেবাদানকারী ৩০০ ব্যক্তি অংশ নেন, যাদের মধ্যে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি ২০০৮’ সম্পর্কে জানেন মাত্র ৪৩ দশমিক ৬ ভাগ। ৮৪ ভাগ চিকিৎসাকর্মী মনে করেন, বর্তমান মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। এ সমস্যা সমাধানে একটি সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন দরকার বলে মনে করেন ৯০ দশমিক ৩ ভাগ চিকিৎসাকর্মী।
সারা দেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উত্পন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪ দশমিক ১ শতাংশ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ভোগ বাড়তে থাকায় বর্জ্যও বাড়ছে। এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে। এখন যোগ হয়েছে মেডিকেল বর্জ্য। এখন নিয়ম করা হচ্ছে, প্রতিটি হাসপাতালে এ বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে। দেশটা তো আমাদের সবার, তাই সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকেই এ সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুুর রহমান বলেন, ‘এ সমস্যার মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে—সচেতনতাকে অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সবার উদ্যোগের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন, লাগসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ। এ দায়িত্ব পালনের একটা সুস্পষ্ট বিভাজন দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে এ সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহাম্মদ বলেন, ‘বিদ্যমান কাঠামোয় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা উদ্যোগ নেই, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এ সংকট সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্র্যাকের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে একটি সময় উপযোগী সমাধান বের করা সম্ভব। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্র্যাকের মতো উন্নয়ন সহযোগীকে পাশে পেতে চায় পরিবেশ অধিদপ্তর।