আজকের দেশ রিপোর্ট : কর্নকাঠী গ্রাম থেকে ফিরে আসার পর এসআই মতিয়ার রহমান সাহেবের সাথে চুরির মামলা সংক্রান্তে দুজনে নিভৃতে আলোচনা করলাম৷ এই মামলার সন্দিগ্ধ চোর কালুর নামে থানায় অনেক মামলা তা হলেও আজ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা যায়নি৷ তাকে গ্রেফতারের জন্য যে অভিযান পরিচালিত হয় নি এমনটি নয়, কিন্তু তারপরেও এই কুখ্যাত চোরকে আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না, সেই কারণে এই চোরকে গ্রেপ্তার করবার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে৷ এ কারণে প্রথমে দরকার এই চোর কোথায় অবস্থান করে তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করা৷ যদি তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করা যায় তবে কর্নকাঠী গ্রামের বাবুল সরদারের বাড়িতে স্বর্ণালঙ্কার সহ যে মালামাল গুলি চুরি হয়েছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে ৷এই উদ্দেশ্যে আমাদের এলাকায় এলাকায় ঘুরতে হবে এবং সোর্স লাগাতে হবে৷ সেই সোর্সই আমাদের কালু চোরের অবস্থানের সঠিক সন্ধান দিতে পারবে৷ মতিয়ার রহমান সাহেব মন্তব্য করে বললেন তিনি অলরেডি কয়েকজন বিশ্বস্ত সোর্স এ ব্যাপারে কাজে লাগিয়েছেন৷ তারা সংবাদ দিলেই আমরা ছদ্মবেশে এলাকায় ঢুকে যে কোনো মূল্যে কালু চোরকে ধরে ফেলব৷ কালু তিন তিনটে বিয়ে করেছে, চুরি করার পর সে এক এক সময় এক এক জন স্ত্রির সাথে অবস্হান করে ৷ সোর্সের মাধ্যমে কোন স্ত্রির সাথে অবস্হানের সংবাদ পাওয়া গেলে আমরা সবাই মিলে এলাকায় চলে যাব৷ এরপরে আমরা দুজন আমাদের গোপন আলোচনা শেষ করলাম৷ অপেক্ষা করতে থাকলাম কালুর অবস্থান নিয়ে কখন সোর্স আমাদের কাছে আসে৷ বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলো না৷ দুই দিন পর সোমবার সকালে চৌকিদার খগেন আমাদের কাছে খবর নিয়ে এলো গৌরনদী থানায় আধুনা গ্রামে কালু চোরের ছোট স্ত্রী সুন্দরীর সাথে কালু চোর আজ রাতে থাকতে পারে বলে সংবাদ অাছে ৷ আমি আর এস আই মতিয়ার রহমান সংবাদটি পেয়ে ওসি সাহেবের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম ৷ওসি সাহেব বললেন সেখানে গেলে তো ছদ্মবেশে যেতে হবে, তা না হলে পুলিশ হয়ে গেলে আসামী টের পেয়ে পালিয়ে যেতে পারে৷ কি ছদ্মবেশ নিলে ভালো হয় ওসি সাহেব আমাদের কাছে জানতে চাইলেন৷ আমি বললাম আশে পাশে যদি কোন মসজিদ থাকে এবং সেখানে যদি আমরা তাবলীগ জামাতের লোক হয়ে যায় তবে আমাদের কেউ সন্দেহ করতে পারবে না৷ আমাদের ব্যাগে আমাদের ইউনিফর্ম থাকবে এবং আমরা যাবার সময় তাবলীগ জামাতের মুসল্লি সেজে সেখানে যাব৷ ওসি সাহেব বললেন তোমার গালে তো দাড়ি নেই,তোমার বয়স তো অল্প৷ তখন আমি বললাম নাটকে অভিনয় করবার সময় কি- ভাবে গালে দাড়ি লাগাতে হয় তা আমার জানা আছে৷ এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকায় আমি মতিয়ার রহমান সাহেবকেও মুসল্লী সাজাতে পারব এবং আমিও গালে ছোট ছোট দাড়ি লাগাতে পারব ৷ তবে তার জন্য আমাকে বাজারে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারনের কিছু জিনিস কিনতে হবে ৷ওসি সাহেব হেসে বললেন ঠিক আছে মতিয়ার সাহেবকে নিয়ে তাহলে তুমি বাজারে চলে যাও ৷এ অভিযান এবার সফল করতেই হবে৷ এরপর আমি আর এস আই মতিয়ার রহমান সাহেব ছদ্মবেশ ধারণের গোঁফ দাড়ি বানানোর ক্রেপ কেনার জন্য বরিশালের চক বাজারে গেলাম ৷সেখান থেকে দাড়ি বানানোর ক্রেপ , আঠা, সিঁদুর, পেউড়ি ইত্যাদি কিনে নিলাম৷ তারপর আবার থানায় ফিরে এলাম৷ ওসি সাহেবের রুমে ঢুকে ওসি সাহেবকে ছদ্মবেশে ধারনের জিনিসপত্র কেনা হয়েছে জানালাম৷ওসি সাহেব বললেন ঠিক আছে সবায় তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এলাকায় চলে যান, তারপর সেখানে একটা মসজিদে মুসল্লির ছদ্মবেশে ঢোকেন এবং পরে সেখান থেকে সে যদি তার স্ত্রীর বাড়িতে আসে তবে তাকে ধরে ফেলেন ৷ আমি আর মতিয়ার রহমান সাহেব ওসি সাহেবকে বললাম ঠিক আছে স্যার তেমনটিই হবে৷ এরপরে আমি আর মতিয়ার সাহেব থানার 5 জন ভালো কনস্টেবল এবং এ এস আই সামাদকে নিয়ে একটি স্পেশাল টিম গঠন করলাম৷ তারপর সবাইকে নিয়ে ওসি সাহেবের কক্ষে গেলাম৷ওসি সাহেব সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসলেন এবং ছদ্মবেশে কিভাবে মসজিদে সেল্টার নিতে হবে এবং সেখান থেকে আসামির সংবাদ পেয়ে তাকে ধরতে হবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ব্রিফ করলেন৷ তিনি টি&টি ল্যান্ড ফোনে অফিসার ইনচার্জ গৌরনদী থানার সাথে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করলেন এবং তার একজন বিশ্বস্ত অফিসার দিয়ে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ রাখলেন৷ তিনি ওসি গৌরনদী সাহেবকে এই বলে আরও অনুরোধ করলেন যেন আধুনা মসজিদেের ইমাম সাহেব কোতোয়ালি থানা পুলিশকে মসজিদে থাকতে সাহায্য করেন এবং তাদের অবস্থানের বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে৷ তখন গৌরনদী থানার ওসি সাহেব আমাদের ওসি সিরাজুল ইসলাম সাহেব বললেন তিনি তার থানা থেকে একজন চৌকস অফিসারকে এক্ষনি অাধুনা মসজিদে পাঠাচ্ছেন,সে সবকিছু ঠিক করে রাখবে ৷এর পরে আমি পুলিশ ক্লাবে রওনা হয়ে গেলাম৷ ক্লাব থেকে আমার ট্রাভেল ব্যাগটা আমার সাথে নিলাম কারণ ছদ্মবেশ এবং ইউনিফর্ম ব্যাগের মধ্যে থাকবে৷ প্রয়োজনে ইউনিফরম ব্যবহার করা লাগতে পারে৷আমি আর মতিয়ার সাহেব বাসযোগে গৌরনদী থানার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে যাবার জন্য রিক্সা যোগে প্রথমে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে সব পুলিশ ফোর্স সহ সিভিল ড্রেসে এসে হাজির হলাম ৷সেখান থেকে আধা ঘন্টা পর বরিশাল থেকে যশোর গামী চাকলাদার পরিবহন কোচের সুপারভাইজারকে বলে কোচে উঠে বসলাম ৷বাস স্টার্ট দিল, সামনে দুটি ফেরিঘাট দোয়ারিকা অার শিকারপুর পার হয়ে যেতে হবে ৷এ কারণে বাসের বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে কমপক্ষে ঘন্টা দেড়েক লাগবে তার পরেও যদি ফেরি বিভ্রাট হয় তাহলে দু’ঘণ্টার অধিককাল সময় পার হয়ে যাবে৷ আমাদের সাথে থাকা এএসআই সামাদ এর আগে গৌরনদী থানায় চাকরি করেছে, এজন্য সব রাস্তাঘাট তার চেনা৷তার বলা মতে বাটাজোর থেকে ভ্যান অথবা টেম্পু যোগে আধুনা গ্রামে পৌঁছাতে হবে৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম আমরা টেম্পু নয় রিক্সা ভ্যানে যাব যাতে করে মানুষ মনে করে আমরা আসলেই তাবলীগ জামাতের লোক৷ আমাদের সবার মাথায় টুপি পরা এবং আমরা রওনা হওয়ার আগে মতিয়ার সাহেবের রুমে বসে বাজার থেকে কেনা দাড়ি আর গোফ লাগিয়ে নিজেদেরকে পাকা মৌলভী হিসেবে তৈরি করে ফেলেছি।