তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে!

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

নিম্নচাপের প্রভাব বাজারে,

সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি,

মাছ-মাংস অপরিবর্তিত

 

বিশেষ প্রতিবেদক : হঠাৎ বেড়ে যাওয়া আলুর দাম কমছে কিছুটা। তবে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে আরো বাড়তে পারে সবজির দাম। তবে একশ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটি ও শসার দাম কিছুটা কমে এসেছে। পেঁপে ছাড়া সব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকার ওপরে। তবে গত দুদিন বৃষ্টির কারণে নাগালের বাইরে থাকা সবজির বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাই নি¤œ আয়ের মানুষের এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে শাকসবজির দাম।
এদিকে স্বস্তি মিলছে না পেঁয়াজের দামেও। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। গত মাসে ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে এসে মোটেও স্বস্থি পাই না। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। ১০০ টাকার সবজি দিয়ে একবেলাও হয় না। সবজির এত দাম আমার ৫০ বছরের জীবনে আর দেখিনি।’
সাজেদুল ইসলাম ও মহসীন আহমেদ নামের আরো দুই ক্রেতা বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই সবজির দাম চড়া। এর মধ্যেই তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেড়ে গেল। আগে কখনো পুরাতন আলুর কেজি ৪০ টাকা কিনে খাইনি। এখন পুরাতন আলুর কেজি ৪৫ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে। এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকা দিয়ে। ৭০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম এমন হলে আমরা চলব কীভাবে?’
বাজারঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে নি¤œআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ছে। করোনার কারণে দেশে অনেক মানুষ বেকার হয়েছে। এছাড়া অনেকের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ বাস্তবতায় দফায় দফায় নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নি¤œআয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রায় দুই মাস ধরে চড়া থাকার পর অবশেষে শাক-সবজির দাম ক্রেতাদের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। তবে মাছ, মাংস, চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল আগের দামেই রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, উত্তরা, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি বাজার, খিলগাঁও বাজার, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা এবং মগবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সবজির দাম কমা প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তাই দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে তদারকিমূলক অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাম কিছুটা কমিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজধানী কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. রহিম মিয়া বলেন, বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। এ ছাড়া মান অনুযায়ী আলু ৩০ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজগুলো এখন আলু ছাড়ছে। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, এটা অব্যাহত থাকলে সামনে দাম আরো কমবে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, ‘আলুর দাম কমেছে। আলু বিক্রি করছি ৪২ টাকায়। বাছাই আলু বিক্রি করছে হচ্ছে ৪৪ টাকায়। যেহেতু পাইকারি বাজারে দাম কমছে, দু-একদিনে খুচরা বাজারে দাম আরো কমবে।’ তবে নি¤œচাপের কারণে শাকসবজির দাম আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এনামুল হক।
রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে। সেঞ্চুরি করেছে প্রায় আধা ডজন শাকসবজি। কোনোটির দাম ৭০, কোনোটি ৮০, আবার কোনোটি ৯০ টাকা। সবজির এমন চড়া বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে ডিম ও কাঁচামরিচের। ৪০ থেকে ৫০ টাকা পোয়া (২৫০) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে কাঁচামরিচের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে শিম, পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটির সঙ্গে নতুন করে ১০০ টাকা কেজির তালিকায় নাম লিখিয়েছে উস্তা। এর মধ্যে পাকা টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শুধু এসব সবজি নয়, বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে মুলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে প্রতিকেজি ঝিঙা-ধন্দুল-চিচিঙা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর টমেটো কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তবে কাঁচামরিচ, করলা, উস্তা, পটলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর উস্তা ৯০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে তেলের বাজার আগের বাড়তি মূল্যেই রয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। প্রতিকেজি ডাবলী ও অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ থেকে ১২০ টাকা আর চিনি প্রতিকেজি ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চালের বাজারও আগের মতোই চড়া। খুচরায় প্রতিকেজি আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, পায়জাম ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫৮ টাকা, জিরা মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ টাকা, পোলাও চাল (খোলা) ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা আর গরু মাংস ৫৫০ টাকা ও মহিষের মাংস ৬০০ টাকা কেজিদরে।
বাজারে আগের দামে ব্রয়লার ও লেয়ার বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রি কম হওয়ায় সোনালি মুরগির দাম প্রতিকেজিতে ২০ টাকা কমে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৪০ টাকায়। দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতিকেজি রুই (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, মৃগেল ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাস ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, কৈ মাছ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, সিলভার কর্প ১০০ টাকা, মিররর কাপ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর প্রতিকেজি কাঁচকি ও মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, দেশি টেংরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি চিংড়ি (ছোট) ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৬০০ টাকা।
বাজারে দেশি পেঁয়াজ ও আদার বাজার অপরিবর্তিত থাকলেও দাম কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের। এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা, দেশি কিং পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আমদানি করা মিশরের পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও চায়না পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। তবে রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের এমন দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দফায় দফায় বাড়ছে দাম। বিভিন্ন সময় লক্ষ করা গেছে, নানা অজুহাত বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাভাইরাস ও নি¤œচাপকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি লাভের আশায় দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে।


বিজ্ঞাপন