বিত্তশালীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদক : সকল শ্রেণি-পেশার বিত্তশালীদের নিজ নিজ এলাকার অসহায়-দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, শুধু নিজেরা ভালো থাকব, নিজে সুন্দর থাকব, নিজে আরাম আয়েশে থাকব-আর আমার দেশের মানুষ, এলাকার মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা তো মানবতা না। শনিবার সকালে ‘মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষকে সরকারের সচিবগণের গৃহ উপহার’ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। সরকারের ৮০ জন সিনিয়র সচিব/সচিব নিজ নিজ এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি গৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। আজ ১৬০টি পরিবারে গৃহের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদিও করোনাভাইরাসের কারণে হয়ত অনেক কাজ থমকে গেছে। তারপরও আপনারা দেখেছেন, আমরা কিন্তু বসে নেই। এই করোনাভাইরাসের মধ্যেও আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা যেন পৌঁছায় আমরা সেই চেষ্টাও করে যাচ্ছি।
‘আমি মনে করি যারা আমাদের বিত্তশালী তারা যদি একটু যার নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেকেই যদি অন্তত কিছু দুস্থ পরিবারের দিকে ফিরে তাকায়, কাউকে একটা ঘর করে দিলে, তাদের কিছু কাজের ব্যবস্থা করে দিল, তাদের একটু সহযোগিতা করল। শুধু নিজে ভালো থাকবো। নিজে সুন্দর থাকব। নিজে আরাম আয়েশে থাকবো- আর আমার দেশের মানুষ, আমার এলাকার মানুষ তারা কষ্টে থাকবে, এটা তো মানবতা না, এটা তো হয় না।’
‘পাশাপাশি যারা যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, আমি সকলকেই বলবো, চাকরিজীবী বলেন, ব্যবসায়ী বলেন বা যে যেখানেই আছেন, প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা যার যার নিজ নিজ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, সেই স্কুলগুলোর উন্নয়নের জন্য একটু কাজ করেন বা আপনি যেগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই গ্রামে যে কয়টা মানুষকে পারেন, সহযোগিতা করেন।’
সবাই মিলে সম্মিলিত কাজ করলে পরে এদেশের দারিদ্র্য থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ বাংলাদেশের মানুষ অনেক সাহসী। জাতির পিতা তো এই মানুষগুলোকে নিয়েই যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছেন, সেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সারাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনী ছিল। তারা খুব গর্ব করত। তাদের আবার কে হারাবে? কিন্তু বাঙালিরা তো হারিয়ে দিয়েছে তাদেরকে। যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসাবেই আমরা বিশ্ব দরবারে উঁচু করে চলব। হ্যাঁ, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের সম্মানহানি হয়েছিল। বাঙালি জাতি সে বিজয়ের বেশে থাকতে পারেনি। বরং একটা খুনী হিসাবে মাথা নিচু করে চলতে হয়েছে।’
‘কিন্তু ১৯৮১ সালে আমি দেশে আসার পর আমাদের প্রচেষ্টায় ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। তারপর থেকে মানুষের সেবা করে আমরা অন্তত পক্ষে বলতে পারি, বিশ্বে এখন আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। সেই সম্মানটা আমরা অর্জন করেছি।’
‘দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়েছি। কিন্তু আমরা আরও কমাতে চাই। লক্ষ্য ছিল আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে আমরা একেবারে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করব। করোনা ভাইরাসের কারণে হয়ত সেটা আমরা পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতা বলেছিলেন যে দেশের মাটি এতো উর্বর, একটা বীজ ফেললে যেখানে গাছ হয়। সেই গাছের ফল হয়, সেই দেশের মানুষ কেন না খেয়ে কষ্ট পাবে, কথাটা অত্যন্ত বাস্তব। একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু সবাই নিজেরা ভাল থাকতে পারেন। আর যারা একটু বিত্তশালী তারা একটু পাশে দাঁড়ালে আমি মনে করি আরও সুন্দর জীবন পেতে পারেন।’
আমার একটাই লক্ষ্য, কারণ আপনারা এটা বুঝতে পারেন-বাবা মা ভাই সব হারিয়ে সেই শোক ব্যথা বুকে নিয়ে কাজ করি একটা লক্ষ্য সামনে নিয়ে। কারণ এদেশের মানুষের জন্যই তো আমার মা জীবন দিয়ে গেছেন, বাবা জীবন দিয়েছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্ট স্বীকার করেছেন। কাজেই আমি যদি একটু কিছু করে যেতে পারি মানুষের জন্য এটাই আমার জীবনের সার্থকতা। কি পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা আমি কখনো করি না। আমার চিন্তা একটাই কতটুকু আমি মানুষের জন্য করতে পারলাম। দেশের মানুষের জন্য করতে পারলাম, আপনাদের জন্য করতে পারলাম।
মুজিববর্ষে নিজস্ব অর্থায়নে গৃহহীনদের ঘর উপহার দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এই চিন্তাভাবনা থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকে যে মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদেও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে, একটা ঘর করে দিয়েছে। এটা একটা মহৎ কাজ আপনারা করেছেন।
ভবিষ্যতেও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া গৃহ পাওয়া তিনজন উপকারভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান, হাকিম মোল্লা এবং নিগুম চাকমা মতবিনিময় করেন।