চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে উঠেছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীর জন্য পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কোনো মাথাব্যথা নেই।
জানা গেছে, বছর সাতেক আগে আখতারুজ্জামান বাবু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হাসপাতালের তিনটি ফটকের পাশে বসানো হয় বেশ কয়েকটি পানির ট্যাঙ্ক। যা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থা হতো। কিন্তু বছর দুয়েক না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে এই ব্যবস্থা। পরে হাসপাতালের সৌন্দর্য নষ্টের অজুহাতে সরিয়ে নেওয়া হয় ট্যাঙ্কগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের পূর্ব গেইটে অবস্থিত পাবলিক টয়লেটের একটি ট্যাঙ্ক থেকে পানি সংগ্রহ করছেন রোগীর স্বজনরা। বিশুদ্ধ পানি হিসেবে এ পানি ব্যবহার করলেও তা কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তবে রোগীর স্বজনরা বলছেন, এমনিতে পানির সংকট রয়েছে। তারমধ্যে কোন জায়গার পানি বিশুদ্ধ আর কোন জায়গার পানি ময়লা, তা যাচাই করতে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। তাছাড়া প্রতিদিন পানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই বলে এই পানি বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে।
অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মোক্তার আলী নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালে ১৩ দিন ধরে রোগী নিয়ে আছি। প্রতিদিনই পাঁচ লিটারের একটি বোতল কিনে খেতে হচ্ছে। অনেক সময় পানির আরও বেশি প্রয়োজন হয়। এত বড় হাসপাতালে রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। কারো কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকলেও অনেকেরই তা নেই।
হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া কামরুন নাহার নামে আরেক রোগীর স্বজন পানি সংকটের বিষয়ে বলেন, হাসপাতালে শুধু বিশুদ্ধ পানির সংকট নয়-বেশিরভাগ সময় টয়লেটে যাওয়ার পানিও থাকে না। এতে পুরো পরিবেশটা নোংরা হয়ে থাকে। হাসপাতালে সুস্থ হতে এসে উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ।
বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, খাবার পানির খুব একটা ভালো ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, পানির লাইনগুলোতে আয়রণের আস্তরণ জমেছে। লাইনগুলো পুরোটাই পরিবর্তন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ওয়াসার আলোচনা চলছে। ওয়াসার পানি সাপ্লাই স্বাভাবিক হলে হাসপাতালে পানি সংকট কেটে যাবে।
সৌন্দর্যহানির অজুহাতে তিন ফটকের পাশে বসানো বিশুদ্ধ পানির ট্যাঙ্কগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। পরিচালক এলে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবো।
প্রসঙ্গত, ১ হাজার ৩১৩ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকে তিন হাজার রোগী, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি।