কাল শহীদ নূর হোসেন দিবস

এইমাত্র জাতীয়

স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক

 

বিশেষ প্রতিবেদক
নূর হোসেন, শহীদ নূর হোসেন
গণতান্ত্রিক মুক্তির সোপান
বস্ত্রহীন বুকে-পিঠে লেখা-
“স্বৈরাচার নিপাত যাক
গণতন্ত্র নিপাত যাক”
মিছিলে উত্তাল রাজপথ
অগ্রভাগে নূর হোসেন, দেহ-মুখে শ্লোগান
—————————মোদাচ্ছের হোসেন


বিজ্ঞাপন

কাল ১০ই নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রাম-আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনটি ছিল সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনতার উত্তাল আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। গুলিতে নুর হোসেন ছাড়াও শহীদ হন নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের আমিনুল হুদা টিটো। নূর হোসেনের আত্মত্যাগ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান ও তিন জোটের সংগ্রাম অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে।
নূর হোসেনের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। পিতা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় অটোরিকশা চালক। তাঁর মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী মটর চালক লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর পূর্বে এরশাদ ১৯৮২ সালে একটি সেনা উত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন, কিন্তু বিরোধী দলগুলো তাঁর এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাঁদের একমাত্র দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন: ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। মিছিলটি ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশবাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ নভেম্বরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা যখন মিছিল শুরু করছিলাম তখন নূর হোসেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তাকে কাছে ডাকলাম এবং বললাম তার গায়ের এই লেখাগুলোর কারণে তাকে পুলিশ গুলি করবে। তখন সে তার মাথা আমার গাড়ির জানালার কাছে এনে বলল, আপা আপনি আমাকে দোয়া করুন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় আমার জীবন দিতে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, তার মৃত্যুর ঘটনাটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। এরই প্রেক্ষিতে সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে।
তার মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকার নাম শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার করা হয় এবং ১০ নভেম্বরকে শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের আয়োজন করেছে।